—- সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি —–
“— নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে , সৎ কাজ করেছে , তারা আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি । তাদের পালনকর্তার নিকট রয়েছে তাদের পুরস্কার , তাদের জন্য রয়েছে চিরন্তন বেহেশতি বাগান যার তলদেশ দিয়ে ঝর্নাধারা প্রবাহিত আছে । তারা অন্ততকাল সেখানে বসবাস করবে । আল্লাহ তাদের উপর সন্তষ্ট থাকবেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তষ্ট থাকবে । আর এ উচ্চ পদ তার জন্য যে তার সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করে –” ।
সূরা – বাইয়েনাহ , আয়াত – ৭ , ৮ ।
ব্যাখ্যা ও তাফসীর —
এই আয়াতের অর্থ আরও স্পষ্ট ও পরিস্কার করার জন্য সুরা বাইয়েনাহর ৬ নং আয়াত থেকে তাফসির শুরু করাটাই উত্তম ।
“— কিতাবীদের মধ্যে যাহারা কুফরী করে ও মুশরিক কাফেররা জাহান্নামের আগুনে অন্ততকাল ধরে অবস্থান করবে , উহারাই সৃষ্টির অধম —-” ।
সুরা – বাইয়েনাহ , আয়াত – ৬ ।
অর্থাৎ কিতাবীদের মধ্যে হিহুদী , খৃষ্টান এমনকি মুসলমানগনও এবং অন্যান্য মূর্তি পূজারীদের সকলেই জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে ও অন্ততকাল ধরে সেখানেই থাকবে ।
যাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যটি প্রকাশিত হবার পরেও সেই সত্যকে যারা কবুল করে না , শুধুমাত্র তারাই সমগ্র সষ্টিকুল থেকেও নিম্নতর স্তরে অবস্থান করবে ।
এমনকি তারা অবুঝ পশু-পাখী ও জীব-জন্ত থেকেও হীন ও নিকৃষ্ট মানের সৃষ্টি ।
এ আয়াত থেকে এটাও বুঝা যায় যে , তারা সাধারন পর্যায়ের অস্বীকারকারী বা কাফের নয় , বরং তারা এমন পর্যায়ের কাফের যে , সত্য দিবালোেকের মত উদ্ভাসিত হওয়ার পরেও তারা ঐ সত্য গ্রহন তো করেই নি উল্টো ঐ সত্যের প্রচন্ড বিরোধিতা করেছিল । শুধু এখানেই থেমে থাকে নি , তারা সত্য প্রচার ও অপরকেও সত্য গ্রহনে প্রচন্ড বাধা দান করে ।
অতএব গড়পড়তা সকল কাফের ও মুশরিকগন এ আয়াতের মধ্যে শামিল ও গন্য হবে না । যদিও তারা অন্ধের মত বাছবিচার ছাড়াই তাদের পূর্ব পুরুষদের রীতিনীতি অনুসরন করে থাকে ।
উক্ত আয়াতে সর্বনিকৃষ্টগনের সাথে পরিচিতি করানোর পরে মহান আল্লাহ পরবর্তী আয়াতে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টিগনের কথা বর্ননা করেছেন ।
“—- নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে , সৎ কাজ করেছে , তারা আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি —” ।
আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হওয়ার জন্য কমপক্ষে তিনটি গুন বর্নিত হয়েছে –
১ ) –
তাদের প্রথম বৈশিষ্ট হল যে , তারা আল্লাহ , রাসুল , সকল ঐশী কিতাবসমূহ , ফেরেশতাগনে , কিয়ামত দিবসে পরিপূর্নভাবে কোন শর্ত ছাড়াই ঈমান এনেছে । অতএব সকল প্রকার মুশরিক ও কাফের যারা ইসলাম কবুল করেনি তারা এ আয়াতের বহির্ভূত ।
২ ) –
খাইরুল বারিয়্যাহদের ২য় বৈশিষ্ট হল , তারা সত্যকে কবুল করে , সৎ কাজ করে ও অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে ।
‘ আমলে সালেহ ” এর অত্যন্ত গভীর ও বিস্তৃত অর্থ রয়েছে ।
হাদিসের ভাষ্যমতে আমলে সালেহ এর সর্ব নিম্ন কাজ হল , যদি কোন মুসলমানের চলার পথে কোন বাধা থাকে সে বাধাকে অপসারন করা । এটাও একটা সৎ কাজ বলে বিবেচিত হবে ।
” আমলে সালেহ ” এর সর্বোচ্চ কাজ হল ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ন ভাবে কবুল করা ।
৩ ) –
এদের ৩য় বৈশিষ্ট হল যে , তারা সর্বদাই মহান আল্লাহর প্রতি ভীত অবস্থায় থাকে । ঈমানদার ও সৎকর্মশীল হবার পরেও তারা সর্বদাই আল্লাহর প্রতি অনুগত ও ভীত অবস্থায় থাকে ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
লক্ষ্য করুন ৬ নং আয়াতের প্রথম অংশ – “– কিতাবীদের মধ্যে যাহারা কুফরী
( অস্বীকার) করে –” ।
অর্থাৎ এ আয়াতে কিন্ত আমিও পড়ে যাই । কেননা আমিও কিতাবুল কোরআনের অধীন ।
আমি এখন গাদীর এ খুমে মহানবী (সাঃ) কতৃক ঘোষিত ” ইমামত ” পদ্বতির ১ম ইমাম হযরত আলী (আঃ) কে যদি রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকাল পরবর্তী ইমাম হিসাবে না মানি অথবা অস্বীকার করি , তাহলে আমিও কি এই আয়াতের অন্তভুক্ত হয়ে পড়ছি না ?
তাহলে আমিও তো আল্লাহ কতৃক ঘোষিত সর্বনিকৃষ্টদের কাতারে গন্য হয়ে গেলাম !
— বেলায়েত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের তাফসীর ,
মূল – আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজি ,
বাংলা অনুবাদে – মোঃ সামিউল হক ,
পৃ- ৩৩৯ ছায়া অবলম্বনে ।
SKL