চোরের হাত কাটা প্রসংগ —
এক ব্যক্তি চুরি করে তা স্বীকার করেছিল ।
ফলে ঐ চোর ব্যক্তি তৎকালীন আব্বাসীয় খলীফা মো’তাসেমের কাছে তার উপর আল্লাহর হুকুম জারী করে তাকে পবিত্র করার অনুরোধ করল ।
খলীফা সকল দরবারী ফকীহদেরকে একত্র করলেন এবং সেই সাথে সপ্তম ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইমাম জাওয়াদকে (আঃ) কেও ডেকে পাঠালেন ।
দরবারে যখন সকলেই উপস্থিত হল তখন খলীফা সকল দরবারী ফকীহগনের কাছে জানতে চাইলেন যে , এর হাত কোথা থেকে কাটতে হবে ?
আমি (দাউদ) বললাম , হাতের কব্জি থেকে।
খলীফা জিজ্ঞাস করলেন , তার দলীল কি ?
বললাম , কেননা তায়াম্মুমের আয়াতে হাত বলতে হাতের কব্জি পর্যন্ত বুঝান হয়েছে ।
) ف َامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ(
” — তোমরা যদি পানি না পাও , তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর এবং তোমাদের মুখ মন্ডল ও হস্তদ্বয়কে মাছেহ কর (মুছিয়া ফেল) — “।
সূরা নিসা – ৪৩ ।
কিছু সংখ্যক ফকীহ আমার এ যুক্তির সমর্থন করলেন ।
কিন্ত কিছু সংখ্যক বললেন যে , না ,কনুই পর্যন্ত কাটতে হবে ।
মো’তাসেম জিজ্ঞাস করলেন , তার দলীল কি ?
তারা বলল , ওজুর আয়াতে হাত বলতে হাতের কনুই পর্যন্ত বোঝান হয়েছে ।
) ف َاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَ‌افِقِ(
অর্থাৎ তোমাদের মুখমণ্ডল এবং হস্তসমূহকে কনুই পর্যন্ত ধৌত কর ।
সূরা – মায়িদাহ – ৬ ।
অর্থাৎ পুরো দরবারে হাত কাটা হবে এ ব্যাপারে সকলেই একমত ।
কিন্ত হাত ঠিক কোথা থেকে কাটতে হবে এ বিষয় ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছিল না কেউ । একাংশ বলছিল , হাতের কব্জি পর্যন্ত এবং অপরাংশ বলছিল , হাতের কনুই পর্যন্ত !
অতঃপর মো’তাসেম বাধ্য হয়ে পবিত্র কোরআনের বৈধ ওয়ারিশ সপ্তম ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আলী ইমাম জাওয়াদ (আঃ) এর কাছে এ ব্যাপারে সুস্ঠ সমাধানের জন্য শরনাপন্ন হলেন ।
” — হে রাসুলের সন্তান ! এখন আপনার মতামত কী ?
ইমাম (আঃ) বললেন যে , এরাতো বললই , আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না । মো’তাসেম পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন এবং কসম খেলেন যে , অবশ্যই আপনাকে মতামত দিতে হবে ।
মুহাম্মদ ইবনে আলী আল জাওয়াদ (আঃ) বললেন , যেহেতু কসম খেয়েছ তাই আমার মতামত বলছি । এরা সকলেই ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছে । কেননা চোরের শুধুমাত্র আঙ্গুল কাটা যাবে ,আর সমস্ত হাত অবশিষ্ট থাকবে ।
মো’তাসেম বললেন , হে রাসুলের সন্তান ! এ কথার দলীল কী ?
ইমাম জাওয়াদ (আঃ) বললেন , যেহেতু রাসূল (সাঃ) বলেছেন , যুগপৎভাবে সাতটি অঙ্গের মাধ্যমে সিজদা সম্পাদিত হয় –
কপাল , দুই হাতের তালু , দুই হাঁটু এবং পায়ের দুই বৃদ্ধাংগুলি ।
সুতরাং যদি চোরের হাতের কব্জি অথবা কনুই থেকে কেটে ফেলা হয় তাহলে সিজদার জন্য হাতই অবশিষ্ট থাকে না ।
এ ছাড়াও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন –
) و َأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّـهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّـهِ أَحَدًا(
” — ইবাদতের স্থানগুলো আল্লাহর , তাই আল্লাহর সাথে কাউকে আহবান কর না — ” ।
সূরা – জিন / ১৮ ।
এবং আল্লাহকে ডাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নামাজ ও সেজদা নামাজের প্রধানতম একটি আমল । অতএব হাতটি কেটে ফেললে সে সেজদা দেবে কিভাবে ! সুতরাং যা আল্লাহর জন্য তা কাটা যাবে না ” ।
ইবনে আবি দাউদ বলে যে , মো’তাসেম ইমাম জাওয়াদ (আঃ) এর দলীলকে যুক্তিযুক্ত মনে করে তা গ্রহণ করেছিলেন ।
আর ইমাম (আঃ) এর নির্দেশ মোতাবেক চোরের আঙ্গুলের অগ্রভাগ কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয় ।
আমরা যারা ভুল সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম ,উপস্থিত জনগণের সামনে অপমানিত হলাম । আর আমি এতই লজ্জিত হয়েছিলাম যে , সেখানেই নিজের মৃত্যু কামনা করি ।
সূত্র – তাফসীরে আইয়াশী , ১ম খণ্ড , পৃ. ৩১৯ / বিহারুল আনওয়ার , ৫০তম খণ্ড ,পৃ. ৫ ।
 
SKL