আমার অব্যবহিত পরেই এমন এক লোক তোমাদের ওপর আপতিত হবে যার মুখ-গহবর প্রশস্ত এবং পেট বিশালাকার । সে যা পাবে তা-ই গলাধঃকরণ করবে এবং যা পাবে না। তার জন্য উদগ্র বাসনা পোষণ করবে। তাকে হত্যা করা তোমাদের উচিত হবে কিন্তু আমি জানি, তাকে তোমরা হত্যা করবে: না । আমাকে গালিগালাজ করতে এবং আমার আদর্শ পরিত্যাগ করতে সে তোমাদের আদেশ দেবে। গালিগালাজ সম্বন্ধে, আমি বলবো, তোমরা আমাকে গালিগালাজ করো, কারণ তা আমার জন্য হবে মর্যাদাকর আর তোমাদের জন্য হবে তার অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ। আমার আদর্শ ত্যাগ বিষয়ে বলবো-আমার আদর্শ ত্যাগ করা তোমাদের উচিত হবে না। কারণ আমি ইসলামের ফিতরাতে জন্ম গ্ৰহণ করেছি এবং ইসলাম গ্রহণ ও হিজরতে সর্বগ্রণী ছিলাম”।
১ । আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবায় যার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন তার সম্বন্ধে মতভেদ আছে। কেউ বলে। জিয়াদ ইবনে আবিহ, কেউ বলে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ আছ-ছাকাকী, আবার কেউ বলে মুঘিরাহ ইবনে শুবাহ। কিন্তু অধিকাংশ টীকাকার মন্তব্য করেছেন যে, ইঙ্গিতকৃত ব্যক্তিটি হলো মুয়াবিয়া এবং এটাই সঠিক। কারণ আমিরুল মোমেনিন যা বর্ণনা করেছেন তা মুয়াবিয়াতে প্রমাণিত হয়েছে। মুয়াবিয়ার অতিভোজ সম্পর্কে ইবনে আবিল হাদীদ লেখেছেন যে, একদিন রাসুল (সঃ) তাকে ডেকে পাঠালেন। লোক ফিরে এসে রাসুলকে (সঃ) বললো, “সে ভোজনে ব্যস্ত।” দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার লোক পাঠিয়ে একই জবাব পাওয়া গেল। এতে রাসুল (সঃ) বললেন, “আল্লাহ্ তার পেটকে তৃপ্ত না করুন।” এ অভিশাপ তার ওপর কার্যকর হয়েছিল। যখন সে খেতে খেতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো তখন বলতো, “নিয়ে যাও; আল্লাহর কসম, আমি ক্লান্ত ও বিরক্ত— তৃপ্ত নই।” সে আমিরুল মোমেনিনকে গালিগালাজ করতো এবং তার অফিসারগণকেও তা করতে আদেশ দিত যা ইতিহাস স্বীকৃত। ইতিহাসে একথাও উল্লেখ আছে যে, মুয়াবিয়া মিম্বারে বসে আমিরুল মোমেনিনকে গাল-মন্দ করতে গিয়ে এমন সব শব্দ ব্যবহার করতো তাতে আল্লাহ ও রাসুল (সঃ) পর্যন্ত কটাক্ষপাতে পতিত হতো। উম্মেল মোমেনিন উন্মে সালমাহ মুয়াবিয়াকে এক পত্রে লেখেছিলেন, “তোমাদের কথায় যদিও মনে হয় তোমরা আলী এবং তাকে যারা ভালোবাসে তাদের গালিগালাজ করছে। কিন্তু নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহ ও রাসুলকে গালাগালি কর। আল্লাহ ও রাসুল যে আলীকে ভালোবাসতেন তার জন্য আমি নিজেই সাক্ষী” (রাব্বিহী’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৩১)। উমর ইবনে আবদিল আজিজকে এ জন্য ধন্যবাদ যে, তিনি মুয়াবিয়া কর্তৃক প্রবর্তিত গালিগালাজ বন্ধ করে তারস্থলে খোৎবায় নিম্নের আয়াত বলার প্রচলন চালু করেছিলেনঃ আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্নীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং নিষেধ করেন। অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালঙ্ঘন ; তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর (3ệ57 VO|7r – e 3 do) এ খোৎবায় আমিরুল মোমেনিন মুয়াবিয়াকে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশ রাসুলের (সঃ) একটি আদেশের ভিত্তিতেই তিনি করেছেন। রাসুল (সঃ) বলেছিলেন, “হে মুসলিম, তোমরা যখন মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বারে দেখবে তখন তাকে হত্যা করো।” (মিনকারী***, পৃঃ ২৪৩-২৪৮; হাদিদ”**, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৪৮; বাগদাদী’, ১২ শ খন্ড, পৃঃ ১৮১; জাহাবী**, ২য় খন্ড, পৃঃ ১২৮; আসকালানী’, ২য় খন্ড, পৃঃ ৪২৮; ৫ম খন্ড, পৃঃ ১১০; ৭ম খন্ড, পৃঃ ৩২৪)