মানুষের বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি বিভিন্ন হবার কারণ সম্পর্কে এ খোৎবাটি আহমদ ইবনে কুতায়বাহ থেকে জিলিব ইয়েমেনী, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ থেকে এবং তিনি মালিক ইবনে জিহায়াহ থেকে বর্ণনা করেছেন। মালিক বলেন, “একদিন আমরা আমিরুল মোমেনিনের সাথে মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণের বিভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপন করলাম। তখন जिनि दब्ल(ब्लन’8 মানুষের মধ্যে বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতিগত বিভিন্নতার কারণ হলো তাদের মাটির উৎসের১ বিভিন্নতা (যে মাটি থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে)। হয় লবণাক্ত মাটি, না হয় মিষ্ট মাটি, না হয় শক্ত মাটি, না হয় কোমল মাটি থেকে সৃষ্টির কারণে তাদের মধ্যে বিভিন্নতা দেখা যায়। মাটির সাদৃশ্যের কারণে মানুষের
মধ্যে সাদৃশ্য হয়ে থাকে এবং মাটির বৈসাদৃশ্যের কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্নতা দেখা যায়। সুতরাং কখনো কখনো সুন্দর আকৃতির মানুষও বুদ্ধিমত্তায় দুর্বল হয়; লম্বা গড়নের মানুষও ভীরু প্রকৃতির হয়; কুৎসিত চেহারার লোকও ধাৰ্মিক হয়; খাট গড়নের লোকও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়; সুস্বভাবের লোকও মন্দ বৈশিষ্ট্যের হয়; জটিল হৃদয়ের লোকও বিভ্রান্ত মনের হয় এবং তীক্ষ্ম কথার লোকও জাগ্রত হৃদয়ের হয়।
১। আমিরুল মোমেনিন বৰ্ণনা করেছেন যে, মানুষের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র বিভিন্ন হবার মূল কারণ হলো— যে মাটি থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে সে মাটির উৎসের বিভিন্নতা। মাটির উৎসের বৈশিষ্ট্য অনুসারেই তাদের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র গঠিত হয়। সুতরাং সমগোত্রীয় মাটির মানুষের মানসিক বিকাশ ও চিন্তা-চেতনার ভাবধারা একই রকম হয়ে থাকে। কোনকিছুর উৎস বলতে ওটাকে বুঝায় যার ওপর তার অস্তিত্বে আসা নির্ভরশীল। কিন্তু এটা অস্তিত্বের কারণ নয়। আরবিতে ‘তিন’ শব্দের বহুবচন তিনাহ’ যা উৎস অথবা ভিত্তি বুঝায়। এখানে ‘তিনাহ’ বলতে বীর্যকে বুঝানো হয়েছে যা বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে মানুষের আকৃতি ধারণ করে। এর মূলোৎস বলতে সেসব উপাদানকে বুঝানো হয়েছে যা বীর্যের উৎপত্তির সহায়ক। তাই লবণাক্ত, মিষ্ট, কোমল ও শক্ত শব্দগুলো দ্বারা বীর্যের মৌলিক উপাদানকে বুঝানো হয়েছে। যেহেতু মৌলিক উপাদানগুলোতে বিভিন্ন প্রকার গুণাবলী থাকে সেহেতু তা থেকে উৎপন্ন বীর্যও বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। ফলে মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণ বিভিন্ন রকমের হয়।
হাদীদ’*’ (১৩শ খন্ড, পৃঃ১৯) লেখেছেন যে, “তিনাহর মৌল” বলতে সেসব সংরক্ষক উপাদানকে বুঝায় যা ভিন্ন ভিন্ন গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। প্ল্যাটো এবং অন্যান্য দার্শনিকগণও এ বিষয়ে একই ধারনা পোষণ করে। এগুলোকে তিনাহর মৌল বলার কারণ হলো এরা মানবদেহের জন্য আশ্রয় হিসেবে কাজ করে এবং উপাদানগুলোর বিভাজন প্রতিহত করে। কোন কিছুর অস্তিত্ব যেভাবে তার ভিত্তির ওপর নির্ভর করে, একইভাবে দেহের অস্তিত্ব সংরক্ষক উপাদানের (Preservative factors) ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ সংরক্ষক উপাদান থাকবে ততক্ষণ দেহ ভাঙ্গন ও বিখন্ডায়ন থেকে নিরাপদ থাকবে এবং উপাদানগুলোও বিভাজন ও বিচ্ছুরণ থেকে রক্ষা পায়। সংরক্ষক উপাদান দেহ ত্যাগ করলে অন্যান্য উপাদানও বিছুরিত হয়ে পড়ে।
এসব ব্যাখ্যা দ্বারা আমিরুল মোমেনিনের বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ বিবিধ মৌল উপাদান সৃষ্টি করেছেন যার মধ্যে কিছু দূষিত, কিছু বিশুদ্ধ, কিছু দুর্বল ও কিছু শক্তিশালী এবং মানুষ তার মৌল উপাদান অনুযায়ী আচরণ ও কার্য করে। যদি কোন দুব্যক্তির মাঝে সাদৃশ্য পাওয়া যায়। তবে বুঝতে হবে যে, তাদের মৌল উপাদান অভিন্ন। ফলে দুব্যক্তির মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও বুঝতে হবে এটা মৌল উপাদানের কারণেই ।
যাহোক, মানুষের বৈশিষ্ট্য ও আচরণে বিভিন্নতার কারণ মৌল উপাদান বা প্রাথমিক গঠন মানতে হলে মানুষের কর্মকান্ডে নির্ধারিত ভাগ্যলিপির কথা স্বীকার করতে হয়। সেক্ষেত্রে “ইচ্ছার স্বাধীনতা’ স্বীকার করা যায় না। যদি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও কর্মকান্ড ‘তিনাহর’ ওপর নির্ভরশীল হয় তবে যা নির্ধারিত আছে তা ঘটবেই এবং সে কারণে কাউকে ভালো কাজের জন্য প্ৰশধ্বংসা করা অথবা খারাপ কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। কিন্তু এ হাইপােথেসিস” সঠিক নয়। কারণ সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার পরে মহিমান্বিত আল্লাহ যেভাবে এর সবকিছু জানেন সেভাবে অস্তিত্বশীল হবার পূর্বেও তিনি তা জানতেন। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মানুষ মুক্ত-ইচ্ছা দ্বারা কী করবে। আর কী করবে না এটা মহিমান্বিত আল্লাহ জানতেন। সুতরাং আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং উপযুক্ত ‘তিনাহ্’ থেকে তাকে সৃষ্টি করেছেন। এ তিনাহ তার কর্মকান্ডের কারণ নয় এবং তার মুক্ত ইচ্ছার প্রতিফলনে বাধার সৃষ্টি করে না। উপযুক্ত তিনাহ থেকে সৃষ্টি করা দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্ জোরপূর্বক মানুষের পথে বাধার সৃষ্টি করেন না। কিন্তু মানুষ তার মুক্ত ইচ্ছা দ্বারা যে পথে যেতে চায় আল্লাহ সে পথে যাবার অনুমতি দেন। (ইচ্ছার স্বাধীনতা বিষয়ে উপরোক্ত অভিমতের সাথে বাংলা অনুবাদক দ্বিমত পোষণ করে / মানুষ সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাধীন একথা স্বীকার করা যায় না। ধরা যাক, একজন লোক ইচ্ছা করলে এক পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে অন্য পা শূন্যে তুলে রাখতে পারে । কিন্তু সে ইচ্ছা করলেই দুপা শূন্যে তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না । এতে স্পষ্ট বুঝা যায় মানুষ একই সাথে স্বেচ্ছাধীন ও আল্লাহর ইচ্ছাধীন / মূলত আল্লাহর ইচ্ছাধীন সব কিছুতেই সম্ভাবনাময় শুভ বা মঙ্গল নিহিত / সে কারণেই আল্লাহ মঙ্গলময় । কিন্তু তিনাহর” প্রভাব হোক। আর ইচ্ছার কারণেই হোক সে শুভ আমল না করলেই অমঙ্গল সংঘটিত হয় । একটা আমের আটটি হাতে নিয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে আঁটিটির মধ্যে একটা সম্ভাবনাময় প্রকান্ড আম গাছ রয়েছে যাতে অনেক সুমিষ্ট আমি ফলতে পারে । এ সম্ভাবনাটির প্রধান শর্ত হলো আঁটিটিকে উপযুক্ত মাটিতে পুতে রাখতে হবে / মাটিতে না পুতে আঁটিটিকে দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখলে উক্ত সম্ভাবনা কখনো বাস্তবরূপ পরিগ্রহ করবে না । আল্লাহ জোর করে দেয়ালে বুলানো আঁটি থেকে প্রকান্ড আমি গাছ বানিয়ে দেবেন না । এ শর্তটি হলো- “তিনাহী”—বাংলা অনুবাদক