রাসুল প্রেরণের উদ্দেশ্য এবং কুরআনের বিরোধিতা করার সময়ের অবস্থা সম্পর্কে
আল্লাহ মুহাম্মদকে (সঃ) সত্য সহকারে প্রেরণ করেছিলেন যাতে তিনি মানুষকে মূর্তি পূজা থেকে আল্লাহর ইবাদত এবং শয়তানের আনুগত্য থেকে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। তিনি তাকে কুরআনসহ প্রেরণ করেছেন যা তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং মজবুত করেছিলেন যাতে মানুষ তাদের রবকে জানতে পারে যেহেতু তারা তার সম্বন্ধে অজ্ঞ; যাতে তারা তাকে স্বীকার করে যেহেতু তারা তাঁকে অস্বীকার করেছিলো; যাতে তারা তাঁকে গ্রহণ করে যেহেতু তারা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিলো। মহিমান্বিত আল্লাহ কুরআনের প্রত্যাদেশের মাধ্যমে তার কুদরত তাদেরকে দেখিয়ে দিলেন এবং তার শাস্তির ভয় তাদেরকে বুঝিয়ে দিলেন (যদিও তারা তাকে দেখতে পায় নি)। যাদেরকে ইহকালে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন তাদেরকে কিভাবে তার শাস্তির মাধ্যমে ধ্বংস করেছিলেন এবং যা তিনি বিনষ্ট করতে চেয়েছিলেন তা কিভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিলেন— এসব কিছু কুরআনের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে
নিশ্চয়ই, আমার পরে এমন এক সময় আসবে যখন ন্যায়পরায়ণতার চেয়ে অধিক গোপনীয় আর কিছু হবে না, অন্যায়ের চেয়ে প্রকাশ্য আর কিছু হবে না এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের (সঃ) বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার চেয়ে অধিক প্রবাহমান আর কিছু হবে না। এ সময়কার মানুষের কাছে কুরআন অপেক্ষা মূল্যহীন আর কিছু হবে না; তারা আবৃত্তির কারণে কুরআন আবৃত্তি করবে। কুরআনকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলা অপেক্ষা মূল্যবান কাজ তাদের কাছে আর কিছু থাকবে না (অর্থাৎ কুরআনের প্রকৃত দর্শন থেকে দূরে সরে যাওয়া)। শহরগুলোতে ধাৰ্মিকতা অপেক্ষা বেশি ঘূণিত আর কিছু থাকবে না এবং পাপ অপেক্ষা বেশি গ্ৰহণীয় আর কিছু থাকবে না।
(সেই সময়) কুরআন যাদের কাছে থাকবে তারা তা ছুড়ে ফেলে দেবে এবং হাফিজগণ তা ভুলে যাবে। এসময়ে কুরআন ও এর লোকেরা (অনুসারী) বিতাড়িত ও নির্বাসিত হবে। তারা একই পথে থেকে একে অপরের সঙ্গী হবে কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দেবে না। ফলে এ সময় কুরআন ও এর লোকেরা (অনুসারী) জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে, কারণ গোমরাহি কখনো হেদায়েতের সাথে থাকতে পারে না। মানুষ বিভিন্ন মতাবলম্বী দলে বিভক্ত হয়ে দলবদ্ধ হবে এবং তারা সমাজবদ্ধতা থেকে কেটে পড়বে। মনে হবে যেন তারা কুরআনের নেতা হয়ে গেছে, কুরআন তাদের নেতা নয়। কুরআনের নাম ছাড়া আর কোন কিছুই তাদের কাছে থাকবে না এবং তারা কুরআনের বর্ণমালা ছাড়া আর কিছুই জানবে না। তৎপূর্বে তারা ধাৰ্মিকগণের ওপর নানা প্রকার বিপদ আপতিত করবে, আল্লাহ সম্পর্কে ধাৰ্মিকগণের সত্য অভিমতকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করবে এবং ধাৰ্মিকতার জন্য পাপের শাস্তি আরোপ করবে।
যারা তোমাদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করেছে, অশেষ কামনা-বাসনা ও মৃত্যুকে ভুলে থাকার কারণে তাদের সকল ওজর প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তওবা অগ্রাহ্য হয়েছে এবং তারা শাস্তি ভোগ করে প্রতিদান পাচ্ছে। আহলুল বাইত সম্পর্কে
হে লোকসকল, যারা আল্লাহর কাছে উপদেশ চায় তারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় এবং যারা তার বাণীকে দেশনা হিসাবে গ্রহণ করে তারা সিরাতুল মুস্তাকিমে প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ আল্লাহর প্রেমিকগণ নিরাপত্তার মধ্যে থাকে এবং তাঁর বিরোধীরা ভীতির মধ্যে থাকে। যারা আল্লাহর মহত্ত্ব সম্বন্ধে জানে তারা নিজেকে অতিক্ষুদ্ৰ মনে করে। যারা আল্লাহর মহত্ত্ব ও কুদরত সম্বন্ধে জানে তাদের মহত্ত্ব আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্যেই প্রকাশ পায়। তোমরা সত্য থেকে এমনভাবে দূরে সরে যেয়াে না যেমন করে সুস্থলোক কুণ্ঠ রোগীর কাছ থেকে সরে পড়ে।
জেনে রাখো, তোমরা কখনো হেদায়েতের দিশা পাবে না। যদি তোমরা হেদায়েত পরিত্যাগকারীকে না চেন। তোমরা কখনো কুরআনের অঙ্গীকার মেনে চলতে পারবে না। যদি তোমরা তা ভঙ্গকারীদের না। চেন। তোমরা কখনো কুরআনের সঙ্গে লেগে থাকতে পারবে না। যদি তোমরা তা বর্জনকারীকে না চেন। এসব বিষয় তাদের কাছে অনুসন্ধান কর যারা এগুলোর স্বত্বাধিকারী, কারণ তারা হলো জ্ঞানের জীবনঝরনা ও অজ্ঞতার মৃত্যু। তারা সেসব লোক যাদের আদেশ তোমাদের কাছে তাদের জ্ঞানের পরিধি প্রকাশ করবে, তাদের নীরবতা বাকশক্তি ব্যক্ত করবে এবং তাদের জাহেরি অবস্থা তাদের বা তেনের বহিঃপ্রকাশ করবে। তারা কখনো দ্বিনের বিরোধিতা করে না এবং দ্বিান সম্বন্ধে একে অপরের সাথে মতদ্বৈধতা করে না। তাদের মধ্যে দ্বিান হলো একটা সত্যবাদী সাক্ষী ও নীরব বক্তা।