সময়ের উত্থান-পতন সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত প্রশধ্বংসা আল্লাহর যিনি তাঁর সৃষ্টির সম্মুখে তাদেরই কারণে স্বতঃপ্রকাশ, যিনি সুস্পষ্ট প্রমাণের কারণে তাদের হৃদয়ে দৃশ্যমান; যিনি কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন। চিন্তা করার ইন্দ্ৰিয় ছাড়া চিন্তা-ভাবনার কথা অযৌক্তিক। তার নিজের কোন চিন্তা-ইন্দ্রিয় নেই। তার জ্ঞান অজ্ঞাত ও গুপ্ত বিষয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং সুগভীর বিশ্বাসের তলদেশ সম্বন্ধেও তিনি অবহিত ।
রাসুল (সঃ) সম্পর্কে আল্লাহ নবিদের সাজোরাহ থেকে, আলোর শিখা থেকে, মহত্ত্বের কপাল থেকে, বাত্হা উপত্যকার শ্রেষ্ঠাংশ থেকে, অন্ধকারের প্রদীপ থেকে এবং প্রজ্ঞার উৎস থেকে তাকে নির্বাচিত করেছেন। রাসুল হলেন ভ্রাম্যমান চিকিৎসক যিনি সর্বদা তার মলম প্রস্তুত রেখেছেন এবং তার যন্ত্রপাতি উত্তপ্ত রেখেছেন (জীবাণুমুক্ত করার জন্য)। এসব চিকিৎসার উপকরণ তিনি ব্যবহার করেছেন যখনই অন্ধ হৃদয়, বধির কান ও রুদ্ধবাক জিহবার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে। তিনি তার ঔষধসহ গাফলতি ও জটিলতার স্থলে উপস্থিত হতেন।
মুসলিমদের দোষারোপ
মানুষ তাঁর প্রজ্ঞার আলো থেকে আলো গ্রহণ করে নি এবং তারা প্রদীপ্ত জ্ঞান-স্ফুলিঙ্গ থেকে শিখা উৎপন্ন করে নি। সুতরাং এ ব্যাপারে তারা চারণভূমির ভ্রাম্যমান গরুর পাল ও কঠিন পাথরের মতো। তাসত্ত্বেও যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য গুপ্ত বিষয়াবলী দৃশ্যমান হয়েছে, ভ্রমণকারীর জন্য ন্যায়ের মুখ সুস্পষ্ট হয়েছে, সমীপবতী হওয়ার মুহুর্ত এর মুখের ঘোমটা তুলে দিয়েছে এবং যারা অনুসন্ধান করে তাদের জন্য নিদর্শনসমূহ উদ্ভাসিত হয়েছে।
আমার কি হয়েছে! আমি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছি। রুহ ছাড়া শরীর ও শরীর ছাড়া রুহমাত্র। তোমরা কল্যাণ ছাড়া ভক্ত, লাভ ছাড়া ব্যবসায়ী। তোমরা জেগে থেকেও ঘুমন্ত, উপস্থিত থেকেও অনুপস্থিত, চোখ থেকেও অন্ধ, কান থেকেও বধির এবং বাকশক্তি থেকেও মূক।
আমি লক্ষ্য করেছি যে, গোমরাহি এর কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে চতুর্দিকে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছে। এটা নিজের ওজনে তোমাদেরকে ওজন করে এবং বিভিন্ন উপায়ে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে। এর নেতা একজন সমাজচ্যুত লোক। সে গোমরাহিতে অটল রয়েছে। সুতরাং সেদিন তোমাদের মধ্য থেকে পাতিলের তলানির মত মুষ্টিমেয় কিছু সসংখ্যক ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। চামড়া যেভাবে ঘষে পরিষ্কার করা হয় তোমাদেরকে সেভাবে ঘষা হবে এবং শস্য যেভাবে মাড়ানো হয় তোমরাও সেভাবে দলিত হবে। কিন্তু ইমানদারগণ এমনভাবে মুক্তি পাবে যেভাবে পাখী মোটা শস্যদানাকে চিকন দানা থেকে বের করে নিয়ে আসে ।
আচ্ছন্নতা বিপথে পরিচালিত করে এবং মিথ্যা প্রবঞ্চনা করে কোথায় তোমাদেরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে তোমরা নীত হও এবং কোথায় তোমরা তাড়িত হও? প্রতিটি কালের জন্য লিখিত দলিল আছে এবং অনুপস্থিতগণের প্রত্যেককে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং তোমাদের উদ্ধারকারী নেতার কথা শোন এবং তোমাদের হৃদয় উপস্থিত রাখা। যদি তিনি তোমাদেরকে বলেন তবে জাগরিত থেকো। অগ্রবর্তজিন তার লোকের কাছে সত্য কথাই বলে। কাজেই (তার কথা শুনতে) বুদ্ধিমত্তা রাখতে ও মানসিকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়। তিনি প্রতিটি বিষয় বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন— একটা সূচের ছিদ্রও বাদ পড়েনি এবং ঘষে পরিষ্কার করে দিয়েছেন যেমন করে গাছের শাখা থেকে ঘষে আঠা বের করা হয়।
তাসত্ত্বেও এখন অন্যায়। ন্যায়ের স্থান দখল করেছে এবং অজ্ঞতা। এর বাহনে আরোহণ করেছে। ঔদ্ধত্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কল্যাণের আহবান চাপা পড়ে গেছে। সময় ক্ষুধার্তা মাধ্বংসাশী প্রাণীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে এবং অন্যায় উটের মতো চিৎকার করছে। অপকর্মের জন্য মানুষ একে অপরের ভ্রাতা হয়েছে, দ্বিনকে পরিত্যাগ করেছে এবং মিথ্যা বলার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে কিন্তু সত্যের ব্যাপারে পরস্পরকে ঘূণা করছে।
অবস্থা যখন এমন তখন পুত্র ক্রোধের কারণ হবে (চোখের শীতলতার পরিবর্তে) এবং বৃষ্টি উত্তাপের কারণ হবে; পাপাচারীর সসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, বুজর্গ লোকের সসংখ্যা কমে যাবে। এ সময়ের মানুষ নেকড়ের মতো হবে, শাসকগণ পশুর মতো হবে, মধ্যবিত্তগণ অতিভোজী হবে এবং দরিদ্রগণ মৃতপ্রায় হয়ে পড়বে। এ সময় সত্য কমে যাবে, মিথ্যা উপচে পড়বে, স্নেহ-মমতা শুধু মুখে মুখে থাকবে কিন্তু অন্তরে মানুষ কলহপ্রিয় হবে। ব্যভিচার বংশানুক্রমের চাবি হবে, সতীত্ব দুস্তপ্রাপ্য হবে এবং ইসলামকে চামড়ার মতো উল্টিয়ে পরা হবে।