৪৭৬। তাদের একজন শাসক এসেছিল । সে ন্যায়পরায়ণ ছিল এবং তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ করেছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না সম্পূর্ণ দ্বিন প্রস্ফুটিত হয়েছিল।
৪৭৭। এমন এক দুঃসময় আসবে যখন ধনবানগণ তাদের ধনসম্পদ দাতে কামড়ে ধরে রাখবে (কৃপনতার রূপক) অথচ এমন স্বভাব তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে উদারতার কথা ভুলে যেয়ো না” (কুরআনঃ ২ ঃ ২৩৭)। এসময় দুষ্ট লোকেরা ওপরে ওঠে যাবে এবং ধামিকদের হীনাবস্থা হবে। এ সময় অসহায়গণের সহায় সম্বল ক্রয় করা হবে অথচ রাসুল (সঃ) অসহায়দের সহায় সম্বল ক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।
৪৭৮। আমাকে নিয়ে দুধরণের লোক ধ্বংসের পথে যাবে। (১) যারা আমাকে ভালোবাসে। অথচ অতিরঞ্জিত করে; (২) যারা আমাকে ঘৃণা করে ও মিথ্যা দোষারোপ করে।
১। রাসুল (সঃ) বারবার তাঁর উম্মতকে আদেশ করেছেন যেন তারা আলীকে ভালোবাসে এবং তিনি আলী সম্পর্কে কোন ঘূণা বা বিদ্বেষ পোষণ নিষিদ্ধ করেছেন। অধিকন্তু রাসুল (সঃ) আলীর প্রতি ভালোবাসাকে ইমান ও তার প্রতি ঘূণাকে মোনাফেকি (নিফাক) বলে আখ্যায়িত করেছেন। (বাণী নং ৪৫এর টীকা) রাসুলের (সঃ) চৌদ্দজন সাহাবি থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ যে আলীকে ভালোবাসলো সে আমাকে ভালোবাসলো, যে আমাকে ভালোবাসলো সে আল্লাহকে ভালোবাসলো, যে আল্লাহকে ভালোবাসলো তিনি তাকে বেহেশতে স্থান দিবেন ।
যে আলীকে ঘৃণা করলো সে আমাকে ঘৃণা করলো, যে আমাকে ঘৃণা করলো সে নিশ্চয়ই আল্লাহকে ঘৃণা করলো, যে আল্লাহকে ঘৃণা করলো সে অবশ্যই
দোযখবাসী হলো । যে আলীকে আঘাত দিলো সে আমাকেই আঘাত দিলো, যে আমাকে আঘাত দিলো। নিশ্চয়ই সে আল্লাহকে আঘাত দিল । “নিশ্চয়ই, যে আল্লাহ ও রাসুলকে আঘাত দেয়। আল্লাহ তাকে ইহকাল ও পরকালে অভিসম্পাত দেন এবং তার জন্য কঠোর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন” (কুরআন—৩৩৪৫৭), (নায়সাবুরী’, ৩য় খন্ড পৃঃ ১২৭-১২৮ ও ১৩০৫ ইসফাহানী”, ১ম খণ্ড, পৃঃ ৬৬-৬৭, বার’, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪৯৬-৪৯৭: আহীর’, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৩৮৩: হাজর***, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪৯৬-৪৯৭. শাফকী***, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১০৮, ১০৯, ১২৯, ১৩১, ১৩২, ও ১৩৩ হিন্দি’, ১২শ খণ্ড, পৃঃ ২০২, ২০৯, ২১৮, ২১৯: ১৫ শ খণ্ড, পৃঃ ৯৫, ১৭ শ খণ্ড, পৃঃ ৭০ শাকী’, ২য় খণ্ড পৃঃ ১৬৬, ১৬৭, ২০৯)
রাসুল (সঃ) তাঁর উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন তারা আলীর বিষয় অতিরঞ্জিত না করে। এ কারণে অনেক সময় তিনি আলীর অনেক গুণাবলীর প্রশংসা থেকেও বিরত থাকেন। জাবির ইবনে আবদিল্লাহ আল-আনসারী থেকে বর্ণিত আছেঃ
যখন আমিরুল মোমেনিন খায়বার দুর্গ জয় করে রাসুলের সম্মুখে উপস্থিত হলেন তখন রাসুল (সঃ) বললেন, “হে আলী, আমার উম্মতের একদল কি এমন হবে না। যারা তোমার সম্পর্কে তেমন কথা বলবে যা নাসারা গণ মরিয়মপুত্র ঈসা সম্পর্কে বলে । আমি যদি তোমার সম্পর্কে একটু কিছু বলি তাহলে তুমি কোন মুসলিমের সম্মুখ দিয়ে যেতে পারবে না । কারণ তারা তোমাকে পাথরোধ করে তোমার পায়ের ধুলা নিতে থাকবে বরকত ও আশীবাদ পাওয়ার জন্য । আমি এটুকু বলা যথেষ্ট মনে করি যে, মুসার কাছে হারুনের মর্যাদা যেমন ছিল আমার কাছেও তুমি তেমন । শুধু ব্যতিক্রম হলো আমার পরে আর কোন নবি আসবে না (শাফকী***, ৯ম খণ্ড, : হাদীদ’, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৪, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ৬৮, ১৮ শ খণ্ড, পৃঃ ২৮২. শাকী’, পৃঃ ২৩৭-২৩৯ হানাকী’, পৃঃ ৭৫, ৭৬, ৯৬, ২২০, আশরাফ**, পৃঃ ২৬৪- ২৬৫ হানাকী***, পৃঃ ৪৪৮-৪৫৪
আমিরুল মোমেনিন নিজেই বলেছেনঃ
রাসুল (সঃ) আমাকে ডেকে বললেন, “হে আলী, তোমার ও মারিয়ম পুত্র ঈসার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। ঈসাকে ইহুদিগণ ঘৃণা করে এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয় । অপরপক্ষে, খৃষ্টানগণ তাকে অধিক ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করে এমন মর্যাদা তাকে দেয় যা তিনি নানা ” এরপর আমিরুল মোমেনিন বলেন, সাবধান, আমাকে নিয়ে দুপ্রকার লোক ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এক প্রকার লোক আমাকে ভালোবাসবে এবং এমন উচ্চকিত প্রশংসা করবে যা আমি নই, অপর প্রকার লোক যারা আমাকে ঘৃণা করবে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ দেবে । সাবধান, আমি নবি নাই এবং আমার কাছে কোন কিছু প্রত্যাদিষ্ট হয় নি, কিন্তু আমি যতটুকু সম্ভব। আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের সুন্নাহ অনুযায়ী আমলা করি (হ্যাম্বল***, ১ম খন্ড, সাবুরী**, তবীজী’, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৪৫-২৪৬, শাকী’, ৯ম খণ্ড, পৃঃ ১৩৩: হিন্দি’, ১২শ খণ্ড, পৃঃ ২১৯, ১৫শ খণ্ড, পৃঃ ১১০: কাহীর’, ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৩৫৬) । বিখ্যাত হাদিসবেত্তা আমির ইবনে শারাহিল আশ-শাবি (১৯/৬৪০-১০৩/৭২১) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল (সঃ) আলীকে ডেকে বলেছেন, “হে আলী, তোমাকে নিয়ে দুধরনের লোক ধ্বংস প্রাপ্ত হবে (১) যারা তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে অতিরঞ্জিত কথা বলবে; (২) যারা তোমার সম্পর্কে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ দেবে” (বার’, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১০১ ও ১১৩০ ; হাদীদ ***, ৫ম খণ্ড, পৃঃ ৬ রাব্বি***, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ৩১২)
৪৭৯ । কেউ একজন আমিরুল, মোমেনিনকে আল্লাহর একত্ব ও ন্যায়বিচার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, একত্ব অর্থ হলো তুমি তাকে তোমার কল্পনা দ্বারা সীমাবদ্ধ করতে পারবে না এবং ন্যায়বিচার অর্থ হলো তুমি তাকে কোন প্রকার দোষারোপ করতে পারবে না।
৪৮০ । জ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞানীদের নীরবতায় কোন মঙ্গল নেই। যেমন মঙ্গল নেই অজ্ঞদের কথা বলাতে ।
৪৮১। বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় আমিরুল মোমেনিন বলেন, হে আল্লাহ, আমাদের জন্য বৃষ্টি দিন বাধ্য মেঘ হতে, অবাধ্য মেঘ হতে নয়।
৪৮২। কেউ একজন বলেছিল, “হে আমিরুল মোমেনিন, যদি আপনি আপনার পাকা চুলে কলপ দিতেন।” তখন তিনি বললেন, “চুলে রং করা এক প্রকার সাজসজ্জা। কিন্তু এখন আমরা শোকাহত অবস্থায় আছি।”
৪৮৩। সে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে শহিদ অপেক্ষাও বেশি পুরস্কৃত হবে যে অসৎ হবার উপায় উপকরণের মাঝে সৎ থাকে। সৎ ব্যক্তির পক্ষে ফেরেশতাদের একজন হওয়াও সম্ভব ।
৪৮৪ । পরিতৃপ্তি এমন এক সম্পদ যা কখনো শেষ হয় না।
৪৮৫। আমিরুল মোমেনিন জিয়াদ ইবনে আবিহকে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের স্থলে পারস্যের ফারস নামক স্থানে প্রেরণকালে আগাম রাজস্ব আদায় নিষিদ্ধ করে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেন। তখন তিনি বলেনঃ ন্যায়ের সাথে কাজ করো এবং উগ্রতা, জবরদস্তি ও অবিচার পরিহার করে চলো, কারণ জবরদস্তি করলে তারা তাদের বাসস্থান ফেলে চলে যাবে এবং অবিচার তাদেরকে অস্ত্রধারণ করতে বাধ্য করবে।
৪৮৬। সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাপ সেটি যেটিকে পাপী হালকাভাবে গ্রহণ করে।
৪৮৭। শিক্ষাগ্রহণ করা অজ্ঞদের জন্য আল্লাহ বাধ্যতামূলক করেন নি। কিন্তু শিক্ষা দেয়া জ্ঞানীদের জন্য তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন।
৪৮৮। সবচেয়ে নিকৃষ্টতম সহচর সে যার জন্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয়।
৪৮৯। যদি কোন ইমানদার তার ভাইকে ক্রুদ্ধ করান, এতে বুঝা যায় তিনি তাকে পরিত্যাগ করেছেন।