৩০১। আশআছ ইবনে কায়েসের পুত্রের মৃত্যুতে আমিরুল মোমেনিন তাকে সন্তুনা দিয়ে বলেনঃ “হে আশআছ। যদি তুমি তোমার পুত্রের জন্য শোক প্রকাশ কর। তবে নিশ্চয়ই তা রক্তের সীমানে করা হবে; আর যদি তুমি সবুর কর তবে মনে রেখো, প্রতিটি দুঃখের জন্য আল্লাহ তুল্য বিনিময় দিয়ে থাকেন। হে আশ আছ, তুমি সবুর করলেও সব কিছুই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিতভাবে চলবে; কিন্তু সবুরের ক্ষেত্রে তুমি পুরস্কার পাবার যোগ্য হবে। আবার তুমি সবুর না করলেও একইভাবে পাপের বোঝা বইতে হবে। হে আশআছ, তোমার পুত্র জীবিত থাকতে তোমাকে আনন্দ দিয়েছে কিন্তু তখন সে ছিল তোমার জন্য পরীক্ষা ও দুঃখের কারণ। এখন সে মারা গেছে— এটা তোমাকে শোকাহত করেছে কিন্তু তা তোমার জন্য পুরস্কার ও রহমতের উৎস প্রমাণিত হয়েছে।
৩০২। রাসুলের (সঃ) দাফন শেষে রওজা মোবারকের পাশে দাঁড়িয়ে আমিরুল মোমেনিন বলেন “নিশ্চয়, আপনার অভাব ব্যতীত অন্য সব কিছুতে সবুর করা ভালো এবং আপনার অভাব ব্যতীত অন্য স্ব কিছুতে ব্যাকুল (অস্থির) হওয়া মন্দ এবং আপনাকে হারানোর যন্ত্রণা অতীত ও ভবিষ্যতের সকল যন্ত্রণা অপেক্ষা তীব্র।”
৩০৩। মুখের সঙ্গে মেলামেশা করো না। কারণ সে তার আমলসমূহ তোমার সামনে সুন্দর করে তুলে ধরবে এবং আশা কববে তুমি যেন তার মতো হও।
৩০৪। এক ব্যক্তি পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব জানতে চেয়ে আমিরুল মোমেনিনকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, “সূর্যের অহ্নিকগতির সমান বা সূর্যের এক দিনের ভ্রমণের সমান।”
৩০৫। তোমার বন্ধু হলো ৩ জন। আর শক্র হলো ৩ জন। বন্ধু ৩ জন হলো— তোমার বন্ধু, বন্ধুর বন্ধু এবং শক্রর শত্রু। আর শত্রু। ৩ জন হলো— তোমার শত্রু, তোমার বন্ধুর শত্রু এবং তোমার শক্রর বন্ধু।
৩০৬। এক ব্যক্তিকে তার শত্রুর বিরুদ্ধে অত্যন্ত তৎপর (যা তার নিজের জন্যও ক্ষতিকর) দেখে আমিরুল মোমেনিন বললেন, “তোমার কর্ম তৎপরতা এমন যে, নিজের পিছনে উপবিষ্ট শক্রকে হত্যা করার জন্য নিজের বক্ষ বিদীর্ণ করে বর্শাবিদ্ধ করার মতো।”
৩০৭। শিক্ষা প্রদানের উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অনেক কিন্তু শিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা অতি অল্প।
৩০৮। যে বেশি ঝগড়া-বিবাদ করে সে পাপী; যে করে না সে অত্যাচারিত হয়।
৩০৯। ঝগড়া-বিবাদকারীর পক্ষে আল্লাহকে ভয় করা কষ্টকর। আমি সে ভুলের জন্য উদ্বিগ্ন নই যে ভুলের পর দুরাকাত সালাত আদায় করে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনার সময় পাই ।
৩১০। কেউ একজন আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলো, “এত বিপুল সংখ্যক লোকের হিসাবনিকাশ আল্লাহ কিভাবে নেবেন।” প্রত্যুত্তরে বললেন, “বিপুল সংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন।” আবার জিজ্ঞেস করা হলো, “তারা তো আল্লাহকে দেখতে পায় না সেক্ষেত্রে কিভাবে তিনি হিসাব-নিকাশ নেবেন।” উত্তরে বললেন, “তিনি অদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও যেভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করেন।”
৩১১। তোমার দূত তোমার বুদ্ধিমত্তার ব্যাখ্যাকারক কিন্তু তোমার পত্রের বাগীতা তোমার প্রকৃত অবস্থা প্রকাশে যথেষ্ট ।
৩১২। যে ব্যক্তিকে অভাব অনটনে দুর্দশাগ্রস্ত করা হয়েছে, তার ওই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক ইবাদত করার প্রয়োজন নেই যে দুর্দশাগ্রস্ত নয় এবং ইবাদত থেকে রেহাই প্রাপ্ত নয়।
৩১৩। মানুষ পৃথিবীর বংশধর এবং মাকে ভালোবাসার জন্য কাউকে দোষারোপ করা যায় না।
৩১৪। আল্লাহর রাসুল হলেন মিসকিনা। যে কেউ তাকে ফিরিয়ে দেবে সে আল্লাহকে ফিরিয়ে দেবে। যে তাকে দান করবে। সে আল্লাহকে দান করবে।
৩১৫। আত্ম-সম্মানবোধ সম্পন্ন লোক কখনো ব্যভিচার করতে পারে না।
৩১৬। জীবনের নির্ধারিত সময়সীমা সতর্ক থাকার জন্য যথেষ্ট ।
৩১৭। মানুষ সন্তানের মৃত্যুতেও ঘুমাতে পারে কিন্তু সম্পদ হারালে ঘুমাতে পারে না।
৩১৮ । পিতাদের মধ্যে পারস্পরিক মমত্ববোধ সন্তানদের মধ্যে আত্মীয়তার সৃষ্টি করে। মমত্ববোধ থেকে আত্মীয়তা অপেক্ষা আত্মীয়তা থেকে মমতা অধিক প্রয়োজনীয়।
৩১৯ । ইমানদারদের ধ্যান-ধারণাকে ভয় করো কারণ মহিমান্বিত আল্লাহ তাদের কথায় সত্য নিহিত করেছেন।
৩২০ । কোন ব্যক্তির বিশ্বাসকে ততক্ষণ পর্যন্ত সত্য বলে ধরে নেয়া যায় না যতক্ষণ তার নিজের যা আছে তদপেক্ষা আল্লাহতে যা আছে তৎপ্রতি অধিক বিশ্বাস না করে।
৩২১। আমিরুল মোমেনিন যখন জামালের যুদ্ধের জন্য বসরায় এসেছিলেন তখন তিনি আনাস ইবনে মালিককে তালহা ও জুবায়রের নিকট প্রেরণ করে বলেছিলেন, এ দুব্যক্তি সম্পর্কে আনাস রাসুলের (সঃ) কাছে যা শুনেছিল তা যেন তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু আনাস তা করে নি। সে ফিরে এসে আমিরুল মোমেনিনকে বললো, রাসুল (সঃ) যা বলেছিলেন তা বলতে সে ভুলে গেছে। এতে আমিরুল মোমেনিন বললেন “যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক তবে আল্লাহ তোমাকে শ্বেতীরোগ দিন যা পাগড়ি দ্বারা ঢাকা না যায়।”
১ । এটা সর্বজন স্বীকৃত যে রাসুল (সঃ) একদিন তালহা ও জুবায়রকে বলেছিলেন, “তোমরা দুজন আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তার সাথে বাড়াবাড়ি করবে ।” রাসুলের (সাঃ) এ বাণী তালাহা ও জুবায়রকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আনাসকে প্রেরণ করা হয়েছিল । কারো কারো মতে রাসুলের (সঃ) যে বাণী তালহা ও জুবায়রকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আনাসকে প্রেরণ করা হয়েছিল তা হলো, “আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা ! হে আল্লাহ, আলীকে যে ভালোবাসে তুমি তাকে ভালোবেসো এবং আলীকে যে ঘৃণা করে তুমি তাকে ঘৃণা করো ।” আমিরুল মোমেনিন বললেন, “তুমি নিজেই তো গাদিরে খুমে উপস্থিত ছিলে । তবুও কেন এ কথাটি বললে না।” আনাস উত্তর দিল, “আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। তাই স্মৃতিশক্তি তেমন কাজ করে না”। এতে আমিরুল মোমেনিন তাকে উপরোক্ত অভিশাপ দেন (বালাজুরী’, পৃঃ ১৫৬-১৫৭: রুস্তাহ’, পৃঃ ২২১; ছাআলিবী “, পৃঃ ১০৫-১০৬; ইসফাহানী’, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯৩)
৩২২। মানুষের মন (ইবাদতের দিকে) কখনো বুকে পড়ে আবার কখনো ইবাদতে অনীহা হয়। যখন মন বুকে পড়ে তখন নফল ইবাদতও করা দরকার। আবার যখন অনীহা এসে যায়। তখন শুধু আবশ্যিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ থাকা ভালো ।
৩২৩। কুরআনে রয়েছে অতীতের খবর, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং বর্তমানের জন্য আদেশ ।
৩২৪ । তোমার কাছে কেউ মন্দ পরামর্শ চাইতে এলে পাথর নিক্ষেপ করো (শয়তানকে যে ভাবে নিক্ষেপ করে) কারণ শয়তানই শুধু শয়তানি কর্ম নিয়ে চিন্তা করে।
৩২৫ । আমিরুল মোমেনি তাঁর সচিব উবায়দুল্লাহ ইবনে রাফিকে বলেন, তোমার দোয়াতে তুলার টুকরা দিয়ে দিয়ো, তোমার কলমের নিব লম্বা রেখো, দুলাইনের মধ্যে ফাঁক রেখো এবং অক্ষরগুলোর একটা অপরটার সঙ্গে লাগিয়ে দিয়ো কারণ এটাই লেখার সৌন্দর্য।