খোদা পরিচিতির ক্ষেত্রে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হল যে, ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুধাবনযোগ্য নয় এমন অস্তিত্বময়ের অস্তিত্বে কিরূপে বিশ্বাস করা যায়?

এ ধরনের ভুল ধারণা সরল চিন্তার ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে পরিলক্ষিত হয়। তাদের মতে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন বস্তুর অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব।

তবে এমন সকল চিন্তাবিদও খুঁজে পাওয়া যায়, যারা তাদের চিন্তার ভিতকে ইন্দ্রিয়ের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছেন এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে সন্দেহাতীত রূপে শনাক্তকরণের উপযুক্ত নয় বলে মনে করেছেন।

এ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, ইন্দ্রিয়ানুভূতি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে অর্জিত হয় এবং আমাদের প্রতিটি ইন্দ্রিয়ই স্বীয় কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট বস্তুগত বিষয়কে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে অনুভব করে থাকে। ফলে যেমনিকরে আশা করা যায় না যে, চোখ শব্দ শুনবে ও কর্ণ রংসমূহকে দেখবে, তেমনি এটাও আশা করা উচিৎ নয় যে, আমাদের সমষ্টিগত ইন্দ্রিয়সমূহও সকল প্রকার অস্তিত্বকেই অনুভব করতে পারবে।

কারণ প্রথমতঃ বস্তুগত অস্তিত্বসমূহের মধ্যেও এমন কিছু অস্তিত্ব রয়েছে যেগুলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়। যেমনঃ আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহ অতিবেগুনী রশ্মি, রঞ্জন-রশ্মি, ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গকে দেখতে অক্ষম।

দ্বিতীয়তঃ এমন অনেক বাস্তবতা বিদ্যমান যেগুলোকে আমরা ইন্দ্রিয় বহির্ভূত উপায়ে অনুভব করে থাকি এবং সন্দেহাতীত ভাবেই এগুলোকে আমরা বিশ্বাস করি -যদিও ঐগুলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় নয়। যেমনঃ আমরা ভয়, ভালবাসা অথবা স্বীয় ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত আছি এবং সন্দেহাতীতভাবে ঐগুলোর অস্তিত্বকে স্বীকার করি -যদিও এ আত্মিক বিষয়গুলো আত্মার মতই ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অনুভবযোগ্য নয়। এমন কি স্বয়ং অনুভুতিও অবস্তুগত ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বহির্ভূত বিষয়।

অতএব ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে কোন বিষয় অনুভূত না হওয়ার অর্থই এটা নয় যে, এর অস্তিত্ব নেই। বরং এ ধরনের কোন বিষয়ের (ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় এমন অস্তিত্ব) অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব কিছু নয়।

মূলঃ আক্বা’য়েদ শিক্ষা, আয়াতুল্লাহ্‌ মুহাম্মদ তাকী মিসবাহ্‌ ইয়াযদী, পৃষ্ঠাঃ ৪১-৪২।

Source: http://www.hussainidalan.com