গভীর রাত, চোখে ঘুম নেই। ঝড়ো হাওয়া আর মেঘের গর্জন, সাথে টিনের চালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ। বই পড়তেও ইচ্ছা হচ্ছেনা। লাইট জ্বালালে পাশ্বে ঘুমিয়ে থাকা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জেগে উঠবে। তাই কি আর করা। রাত প্রায় চারটা হবে, বাধ্য হয়ে উঠলাম। উঠে ওজু করে তাহাজ্জুদের জন্য তৈরি হলাম।
তাহাজ্জুদ শেষে দোওয়া ও তজবীহ পড়ে দেখলাম ফজরের আযানের সময় এখনো হয়নি। কি করি ভাবছি। এক সময় নিজের অজান্তেই আল্লাহর সাথে আলাপ শুরু করলাম।
বল্লাম: কে আমি?
আল্লাহ বলেন: (خُلِقَالْإِنْسَانُ) (তুমি মানুষ) তোমাকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুরা নিসা, আয়াত: ২৮।
বল্লাম: আমি কিভাবে এলাম?
আল্লাহ বলেন: (لَقَدْخَلَقْنَا الْإِنْسَانَ) আমি মানুষকে (তোমাকে) সৃষ্টি করেছি। সুরা ক্বাফ, আয়াত: ১৬; সুরা আত্ তিন, আয়াত:০৪।
বল্লাম: আমাকে না হয় সৃষ্টি করলে কিন্তু আমার চার পাশ্বে এসব কি?
আল্লাহ বলেন: (هُوَالَّذِی خَلَقَ لَكُمْ مَا فِی الْأَرْضِ جَمِیعًا) তিনিই সেই সত্তা যিনি ভূমিতে যা কিছু রয়েছে (সব নে’মত) তোমাদের (ব্যবহরের) জন্য সৃষ্টি করেছেন। সুরা বাকারা, আয়াত: ২৯।
বল্লাম: আমাকে (মানুষকে) কেন সৃষ্টি করা হল?
আল্লাহ বলেন: (وَمَاخَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِیعْبُدُونِ) আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি। সুরা আয যারিয়াত, আয়াত: ৫৬।
বল্লাম: তোমার ইবাদত করে আমার লাভ কি?
আল্লাহ বলেন: (অনেক বিস্তারিত বলে পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল)
তাদের পুরস্কার আল্লাহর কাছে। ০২:৬২;
তাদের কোন ভয় নাই। ০২:৬২; ৫:৬৯;
ক্ষমতার অতিরিক্ত বোঝা বহণ করবে না। ০৭:৪২;
ইনসাফের সাথে কর্মফল দেয়া হবে। ১০:৪;
হায়াতে তাইয়্যেবা (পবিত্র জীবন) লাভ করবে। ১৬:৯৭;
বেহেস্তে প্রবেশ করবে। ১৯:৬০;
অন্যায় করা হবে না। ১৯:৬০;
প্রভুর প্রেম ও ভালবাসা পাবে। ১৯:৯৬;
রহমতপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হবে। ২১:৭৫;
তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না। ২১:৯৪;
আমি (আল্লাহ) তা লিপিবদ্ধ করে রাখি। ২১:৯৪;
জমিনে (আল্লাহর) উত্তরাধিকারী হবে। ২১:১০৫;
রিজিক আল্লাহর কাছে। ২৯:১৭; ৩৪:০৪;
মাগফেরাত (পরিত্রাণ) তাদের জন্য। ৩৪:০৪;
তাদের প্রতিদান বহুগুণ। ৩৪:৩৭;
জান্নাতের ঘরে নিরাপদে থাকবে। ৩৪:৩৭;
জান্নাতে বে হিসাব রিযিক পাবে। ৪০:৪০;
অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। ৬৫:১১;
তারাই সৃষ্টির সেরা। ৯৮:০৭।
বল্লাম: আচ্ছা আমি যদি তোমার ইবাদত করি, তাতে তোমার কোন লাভ আছে কি?
আল্লাহ বলেন: (إِنْتَكْفُرُوا أَنْتُمْ وَمَنْ فِی الْأَرْضِ جَمِیعًا فَإِنَّ اللَّهَ لَغَنِی حَمِیدٌ) যদি তোমরা এবং এ পৃথিবীর সবাই কুফরী কর (অকৃতজ্ঞ হও) নিঃসন্দেহ (তার কোন ক্ষতি হবে না) আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসাভাজন। সুরা ইব্রাহীম, আয়াত: ০৮। (আল্লাহর লাভ-ক্ষতির প্রয়োজন হয়না।)
বল্লাম: কতক্ষন ইবাদত করব?
আল্লাহ বলেন: (وَاعْبُدْرَبَّكَ حَتَّى یأْتِیكَ الْیقِینُ) তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর, যে পর্যন্ত তোমার কাছে নিশ্চিত কথা (মৃত্যু) না আসে। সুরা হিজ্র, আয়াত: ৯৯।
বল্লাম: ইবাদত না হয় করলাম, তোমার সাথে আমার (মানুষের) সম্পর্কটা কি?
আল্লাহ বলেন: (وَنَفَخْتُفِیهِ مِنْ رُوحِی) তোমার মধ্যে আমার রুহ দেওয়া আছে। সুরা আল হিজ্র, আয়াত: ২৯; সুরা সাদ, আয়াত: ৭২।
বল্লাম: তাহলে এই পৃথীবিতে পাঠালে কেন?
আল্লাহ বলেন: (إِنِّیجَاعِلٌ فِی الْأَرْضِ خَلِیفَةً) জমিতে তুমি আমার খলিফা ও প্রতিনিধি। সুরা বাকারা, আয়াত: ৩০।
বল্লাম: প্রতিনিধিরা তো তার মালিকের পছন্দ মত কাজ করে, আমরা কিভাবে বুঝবো তোমার মন মত কাজ হল কি না?
আল্লাহ বলেন: (لَقَدْكَانَ لَكُمْ فِی رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ) তোমাদের জন্য রসুলের (সা.) মধ্যে রয়েছে উত্তম নমুনা (আদর্শ)। সুরা আহযাব, আয়াত: ২১।
বল্লাম: এখন তো আর রাসুল নেই।
আল্লাহ বলেন: (وَمَاینْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْی یوحَى) আর তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। যা বলেন ওহীর মাধ্যমে যা প্রত্যাদিষ্ট হয়। (তার কথা আমারই বাণী।) সুরা নাজম, আয়াত: ৩-৪।
(فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ وَمَا رَمَیتَ إِذْ رَمَیتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ رَمَى) অতএব (হে রাসুল) তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন। আর তুমি ছুঁড়ে মারোনি যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন। (তার কাজ আমার কাজ।) সুরা আনফাল, আয়াত: ১৭।
(وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ یشَاءَ اللَّهُ) আর আল্লাহর চাওয়া ব্যতিরেকে তোমরা কিছুই চাও না। (তার ইচ্ছা আমার ইচ্ছা।) সুরা আল ইন্সান, আয়াত: ৩০।
বল্লাম: তার অর্থ রাসুলের (কাউলি, ফে’লি ও তাকরিরি) সুন্নত বা হাদীস। সেখানেও বিভ্রান্ত আছে। সহীহ যঈফ আছে। একজন একটা হাদীসকে ভাল বলে অন্যজন খারাপ। একজন এক মাযহাবে বিশ্বাসী আরেক জন অন্য মাযহাবে। কিভাবে বুঝবো কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক?
আল্লাহ বলেন: (فَاسْأَلُواأَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ) আর যদি তোমাদের জানা না থাকে তাহলে আহ্লে যিকিরের কাছে জিজ্ঞেস কর। ১৬:৪৩।
এক সময় নিজের অজান্তেই বল্লাম: (الهی! ماذا وجدمن فقدکوما الذی فقدمن وجدک) হে প্রভু আমার! যে তোমাকে হারিয়েছে সে কি পেয়েছে? আর যে তোমাকে পেয়েছে সে কি হারায়েছে?
আল্লাহ বলেন: (وَاللَّهُوَلِی الْمُؤْمِنِینَ) আল্লাহ মুমিনদের বন্ধু। ৩:৬৮।
সত্যিই আল্লাহ্ মুমিনদের প্রতি মেহেরবান ও দয়াশীল। হে প্রভু! আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে তোমার প্রতি ঈমানের জ্যোতি সহকারে মুমিন হওয়ার তৌফিক দান কর। আমিন।
মূল: সৈয়দ এহসান হোসাইন হোসাইনী।
Source: http://www.hussainidalan.com