হাদিসে কিসা বা চাদরের হাদিস —
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী বর্ননা করেন যে ,
হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) যিনি রাসুল (সাঃ) এর কন্যা তাঁকে বলতে শুনেছি যে ,
” একদিন আমার পিতা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমার গৃহে আগমন করলেন ।
রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন , হে ফাতেমা , তোমার উপর সালাম । আমিও তাঁকে বললাম যে , আপনার উপর দরুদ ও সালাম ।
আমার পিতা বললেন যে , আমি বেশ অসুস্থতা বোধ করছি ।
আমি বললাম , আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন ।
রাসুল (সাঃ) বললেন , ওহে মা ফাতেমা , আমার ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দাও ।
আমি পিতার কথামত ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে পিতাকে আবৃত করে দিলাম । তখনই খেয়াল করে দেখলাম যে , রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র চেহারা মোবারক থেকে এমনই নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে ঠিক যেন পূর্নিমার চাঁদের মত লাগছে ।
এর কিছুক্ষন পরে আমার প্রথম পুত্র হাসান ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার নয়নের মনি , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল । হাসান ইবনে আলী (আঃ) তখন বলল , হে আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে খোদার (সাঃ) অতি উত্তম সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তোমার অনুমান সঠিক । ঐ চাদরের ভিতরে তোমার নানাজান উপস্থিত আছেন ।
অতঃপর হাসান ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হাসান ইবনে আলী রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
উহার কিছুক্ষন পরে আমার দ্বিতীয় পুত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল ।
হে আম্মাাজান , আপনাকে সালাম । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার কলিজার টুকরা , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল ।
হোসেন ইবনে আলী তখন বলল , আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে আল্লাহর (সাঃ) খুবই সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তুমি ঠিকই বলেছ । ঐ চাদরের ভিতরেই তোমার নানাজান আছেন ।
তখন হোসেন ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে আমার নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , আমার উম্মতের শাফায়েতকারী , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
এই ঘটনার কিছু পরেই আমার স্বামী আবুল হাসান ইবনে আবু তালেব (আঃ) গৃহে প্রবেশ করলেন । তিনি আমাকে বললেন , হে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কন্যা , আপনার প্রতি আমার সালাম ।
আমি উত্তরে তাকে বললাম , আপনার উপর আমার দরুদ ও সালাম রইল হে আমিরুল মুমিনিন ।
তখন আবুল হাসান ইবনে আবু তালীব (আঃ) বললেন , হে হাসান হোসেনের জননী , আমি এখানে এমন একজনের সুঘ্রান পাচ্ছি যিনি অবশ্যই আমার চাচাত ভাই রাসুলে খোদা (সাঃ) হবেন ।
আমি বললাম , জ্বী , আপনি সঠিক বলেছেন । আপনার দুই পুত্রকে নিয়ে পিতাজান (সাঃ) ঐ ইয়েমেনী চাদরের ভিতরে অবস্থান করছেন ।
এই কথা শোনামাত্র হযরত আলী (আঃ) চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বললেন , হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । এখন আপনি আমায় অনুমতি দিন যাতে আমিও আপনাদের সাথে চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে আমার ভাই , আমার উত্তরাধীকারী , আমার ওয়াসী , আমার ইন্তেকাল পরবর্তী ইমাম ও খলীফা , অতি অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হযরত আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলেন ।
সর্বশেষে আমি (ফাতেমা (সাঃআঃ) চাদরের নিকট যাই এবং বললাম , হে আমার পিতাজান , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । চাদরের নীচে আসার জন্য কি আমার অনুমতি রয়েছে ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার কাওসার , জান্নাতের নেত্রী , আমার নয়নের মনি , তোমারও অনুমতি আছে চাদরের নীচে চলে আসার জন্য ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র আমিও রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলাম ।
যখন আমরা পাঁচজন সকলে মিলে চাদরের নীচে একত্রিত হলাম তখন রাসুল (সাঃ) তাঁর ডান হাত দিয়ে চাদরের দুকিনারা ধরে আকাশের দকে উঠিয়ে বললেন ,
হে আমার আল্লাহ , এরাই আমার আহলে বাইত , আমার রক্তজ বংশধর , এরাই আমার অস্বিত্ব , আমার রক্ত ।
যে এদেরকে দুঃখ কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেও দুঃখ কষ্ট দেবে । আমি তাদের সাথে যুদ্ব করব যে এদের সাথে যুদ্ব করবে এবং যে এদের সাথে সন্ধি করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধি করব । যে এদের শত্রু আমিও তাদের শত্রু । যে এদেরকে ভালবাসবে আমিও তাদেরকে ভালবাসব । কেননা এরা আমার থেকে আমিও এদের থেকে ।
হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ , তোমার রহমত , তোমার পুরস্কার , তোমার দয়া , তোমার বরকত – তুমি আমার এবং আমার এই আহলে বাইতের জন্য ধার্য্য করে দাও । এদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপমান এবং অপবিত্রতা দূরে রেখ এবং এদেরকে পুতঃপবিত্র রেখ যতটা পুতঃপবিত্র রাখার হক আছে ।
এই সময় নবীপত্নী হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন যে , ইয়া আল্লাহর রাসূল (সাঃ) , আমিও কি এই চাদরের ভেতরে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , না , তোমার জন্য অনুমতি নেই । তবে তুমি মঙ্গলের উপর আছ ।”
চাদরের নীচের এই ঘটনা সমূহ সংঘটিত হবার পরে মহান আল্লাহ বললেন , সমগ্র সৃষ্টিজগত আমি যাদের ভালবাসার জন্য সৃষ্টি করেছি সেই পাঁচজন এখন এই চাদরের নীচে একসাথে অবস্থান করছে ।
মহান এই দৃশ্য দেখে হযরত জীবরাইল (আঃ) সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকটি বিনীত প্রশ্ন করলেন যে , ইয়া দোজাহানের মালিক , ঐ চাদরের নীচে কে কে অবস্থান করছেন ?
সর্বদয়ালু আল্লাহ চাদরের নীচে অবস্থানরত সদস্যদের পরিচয় এভাবে করিয়ে দিলেন যে , ঐ চাদরের নীচে রেসালতের খনি তথা পাকপাজ্ঞতন অর্থাৎ ফাতেমার পিতা মুহাম্মাাদ , ফাতেমার স্বামী আলী এবং ফাতেমার দুই সন্তান হাসান ও হোসেন সহ সর্বমোট পাঁচজন আছেন ।
তখন হযরত জীবরাইল (আঃ) আল্লাহর নিকট বিনীত নিবেদন পূর্বক বললেন , হে আমার প্রতিপালক , আমারও কি অনুমতি আছে যে আমিও পৃথিবীতে যেয়ে তাঁদের সাথে ষষ্ঠজন হয়ে যাই ?
মহান আল্লাহ এরশাদ করলেন , যাও তোমাকে অনুমতি দিলাম ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হযরত জীবরাইল (আঃ) পৃথিবীতে এসে পাকপাজ্ঞাতনকে সালাম দিয়ে বললেন যে , আল্লাহ ও তাঁর সমস্ত ফেরেশতাকুলের পক্ষ থেকে আপনাদের উপর দরুদ ও সালাম রইল ।
ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আপনি কি আমাকে চাদরের নীচে প্রবেশের অনুমতি দেবেন ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আল্লাহর ওহীর আমানতদার , তোমাকে অনুমতি দিলাম ।
চাদরে প্রবেশ করে হযরত জীবরাইল (আঃ) বললেন , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট থেকে এই ওহী নিয়ে আমি আপনাদের নিকট এসেছি –
“ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ ।
সুরা – আহযাব / ৩৩ “।
হযরত আলী (আঃ) তখন রাসুল (সাঃ) এর নিকট বিনয়ের সহিত জানতে চাইলেন যে , এই চাদরের নীচে সকলকে একত্রিত করার পিছনে কোন গুরুত্ব বা ফজিলত আছে কি ?
নবীজী (সাঃ) বললেন , অবশ্যই গুরুত্ব আছে । এই চাদরের নীচে অবস্থানকারীগনই আমার আহলে বাইত এবং আল্লাহ তাঁদের নিকট থেকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা বহু দূরে রেখেছেন ।
আর এই ঘটনার ফজিলত এটাই যে , এই চাদরের হাদিস বা হাদিসে কিসা দুনিয়ার যে কোন মাহফিল বা মজলিশে বয়ান করা হবে এবং ঐ মজলিশে উপস্থিত আমার অনুসারীগন বা শীয়াগনের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে এবং যতক্ষন এই হাদিসের বয়ান চলতে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত আসমানের ফেরেশতাগন চর্তুদিক দিক থেকে তাদের ঘিরে থাকবে এবং আমার শীয়াদের জন্য দোয়া করতে থাকবে ।
হে আলী ! আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে , এই হাদিস বয়ানকারী মজলিশে উপস্থিত সকল মহব্বতকারীকে আল্লাহ সকল বিপদ বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন ।
ইমাম আলী (আঃ) তখন বললেন যে , খোদার কসম , আমি ও আমার অনুসারীগন (শীয়া) এই দুনিয়া ও আখেরাতে সফল ও কৃতকার্য হয়ে গেলাম ।
তথ্যসূত্র – আহলে সুন্নি থেকে –
সহীহ আল মুসলিম – ৭ম খন্ড , হাদিস ৬০৪৩ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল মুসলিম শরীফ -পৃ- ৯২৩ হাদিস – ৬১০৩ (মিনা প্রকাশনী) / সহীহ তিরমিযী-৬ষ্ঠ খন্ড , হাদিস ৩৮৭১, ৩৭৮৭ (ইঃ ফাঃ) / তাফসীরে মারেফুল কোরআন -৭ম খন্ড , পৃ- ১৩২ (মুফতি মোঃ সফি, ইঃ ফাঃ) / তাফসীরে মাযহারী- ১০ম খন্ড ,পৃ- ৩৩, ৩৪ (ইঃ ফাঃ) / মেশকাত- ১১তম খন্ড , হাদিস – ৫৮৭৬ (এমদাদীয়া) / শেখ আব্দুর রহিম গ্রন্থাবলী- ১ম খন্ড , পৃ- ৩০৮ (বাংলা একাডেমী) / তাফসীরে মাদানী- ৮ম খন্ড , পৃ- ১৩-১৫ (আঃ হাঃ লাইঃ) / খাসয়িসে নাসায়ী , পৃ- ৪ / মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল , ৪র্থ খন্ড , পৃ- ১৭ / মুস্তাদরাকে হাকিম , ৩য় খন্ড , পৃ- ১৪৭ / সহীহ আল মুসলিম , ৭ম খন্ড , পৃ- ১৩ / সহীহ তিরমিজি , ১২তম খন্ড , পৃ- ৮৫ / সুনানে বায়হাকী , ২য় খন্ড , পৃ- ১৪৯ / তাফসীরে দুররে মনসুর , ৫ম খন্ড , পৃ- ১৯৮ / তাফসীরে ইবনে কাসির , ৩য় খন্ড , পৃ- ৪৮৫ / তাফসীরে তাবারী , ২২তম খন্ড , পৃ- ৭ / তারীখে তাবারী , ৫ম খন্ড , পৃ- ৩১ / ইসাবা , ৩য় খন্ড , পৃ- ৪৮৯ / ইস্তিয়াব , ২য় খন্ড , পৃ- ৫৯৮ / জামেউল উসুল , ১০ম খন্ড , পৃ- ১০১ / কানজুল উম্মাাল , ৭ম খন্ড , পৃ- ১০৩ / মাজমাউল যাওয়ায়িদ , ৯ম খন্ড , পৃ- ১৬৭ / মাকতালুল খাওয়াজেমী , ২য় খন্ড , পৃ- ৬১ / মুশকিল আল আসার , ১ম খন্ড , পৃ- ৩৩৫ / মুসনাদে তাইয়ালাসি , ৮ম খন্ড , পৃ- ২৭৪ / মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন , ২য় খন্ড , পৃ- ৪১৬ / রিয়াজুন নুজরাহ , ২য় খন্ড , পৃ- ২৪৮ / তাফসীরে সালাবী , ৩য় খন্ড , পৃ- ২২৮ / তাহজিবুত তাহজীব , ২য় খন্ড , পৃ- ২৯৭ / তারিখে বগদাদ , ৯ম খন্ড , পৃ- ১২৬ / তরজমা ই ইস্তিয়ার , ৫ম খন্ড , পৃ- ৬৩৭ / তাফসীরুল উসুল , ৩য় খন্ড , পৃ- ২৯৭ / উসুদুল গাবা , ৫ম খন্ড , পৃ- ৫২১ / জাখায়িরুল উকবা , পৃ- ২৪ ।
SKL
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী বর্ননা করেন যে ,
হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) যিনি রাসুল (সাঃ) এর কন্যা তাঁকে বলতে শুনেছি যে ,
” একদিন আমার পিতা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমার গৃহে আগমন করলেন ।
রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন , হে ফাতেমা , তোমার উপর সালাম । আমিও তাঁকে বললাম যে , আপনার উপর দরুদ ও সালাম ।
আমার পিতা বললেন যে , আমি বেশ অসুস্থতা বোধ করছি ।
আমি বললাম , আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন ।
রাসুল (সাঃ) বললেন , ওহে মা ফাতেমা , আমার ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দাও ।
আমি পিতার কথামত ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে পিতাকে আবৃত করে দিলাম । তখনই খেয়াল করে দেখলাম যে , রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র চেহারা মোবারক থেকে এমনই নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে ঠিক যেন পূর্নিমার চাঁদের মত লাগছে ।
এর কিছুক্ষন পরে আমার প্রথম পুত্র হাসান ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার নয়নের মনি , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল । হাসান ইবনে আলী (আঃ) তখন বলল , হে আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে খোদার (সাঃ) অতি উত্তম সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তোমার অনুমান সঠিক । ঐ চাদরের ভিতরে তোমার নানাজান উপস্থিত আছেন ।
অতঃপর হাসান ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হাসান ইবনে আলী রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
উহার কিছুক্ষন পরে আমার দ্বিতীয় পুত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল ।
হে আম্মাাজান , আপনাকে সালাম । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার কলিজার টুকরা , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল ।
হোসেন ইবনে আলী তখন বলল , আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে আল্লাহর (সাঃ) খুবই সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তুমি ঠিকই বলেছ । ঐ চাদরের ভিতরেই তোমার নানাজান আছেন ।
তখন হোসেন ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে আমার নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , আমার উম্মতের শাফায়েতকারী , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
এই ঘটনার কিছু পরেই আমার স্বামী আবুল হাসান ইবনে আবু তালেব (আঃ) গৃহে প্রবেশ করলেন । তিনি আমাকে বললেন , হে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কন্যা , আপনার প্রতি আমার সালাম ।
আমি উত্তরে তাকে বললাম , আপনার উপর আমার দরুদ ও সালাম রইল হে আমিরুল মুমিনিন ।
তখন আবুল হাসান ইবনে আবু তালীব (আঃ) বললেন , হে হাসান হোসেনের জননী , আমি এখানে এমন একজনের সুঘ্রান পাচ্ছি যিনি অবশ্যই আমার চাচাত ভাই রাসুলে খোদা (সাঃ) হবেন ।
আমি বললাম , জ্বী , আপনি সঠিক বলেছেন । আপনার দুই পুত্রকে নিয়ে পিতাজান (সাঃ) ঐ ইয়েমেনী চাদরের ভিতরে অবস্থান করছেন ।
এই কথা শোনামাত্র হযরত আলী (আঃ) চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বললেন , হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । এখন আপনি আমায় অনুমতি দিন যাতে আমিও আপনাদের সাথে চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে আমার ভাই , আমার উত্তরাধীকারী , আমার ওয়াসী , আমার ইন্তেকাল পরবর্তী ইমাম ও খলীফা , অতি অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হযরত আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলেন ।
সর্বশেষে আমি (ফাতেমা (সাঃআঃ) চাদরের নিকট যাই এবং বললাম , হে আমার পিতাজান , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । চাদরের নীচে আসার জন্য কি আমার অনুমতি রয়েছে ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার কাওসার , জান্নাতের নেত্রী , আমার নয়নের মনি , তোমারও অনুমতি আছে চাদরের নীচে চলে আসার জন্য ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র আমিও রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলাম ।
যখন আমরা পাঁচজন সকলে মিলে চাদরের নীচে একত্রিত হলাম তখন রাসুল (সাঃ) তাঁর ডান হাত দিয়ে চাদরের দুকিনারা ধরে আকাশের দকে উঠিয়ে বললেন ,
হে আমার আল্লাহ , এরাই আমার আহলে বাইত , আমার রক্তজ বংশধর , এরাই আমার অস্বিত্ব , আমার রক্ত ।
যে এদেরকে দুঃখ কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেও দুঃখ কষ্ট দেবে । আমি তাদের সাথে যুদ্ব করব যে এদের সাথে যুদ্ব করবে এবং যে এদের সাথে সন্ধি করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধি করব । যে এদের শত্রু আমিও তাদের শত্রু । যে এদেরকে ভালবাসবে আমিও তাদেরকে ভালবাসব । কেননা এরা আমার থেকে আমিও এদের থেকে ।
হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ , তোমার রহমত , তোমার পুরস্কার , তোমার দয়া , তোমার বরকত – তুমি আমার এবং আমার এই আহলে বাইতের জন্য ধার্য্য করে দাও । এদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপমান এবং অপবিত্রতা দূরে রেখ এবং এদেরকে পুতঃপবিত্র রেখ যতটা পুতঃপবিত্র রাখার হক আছে ।
এই সময় নবীপত্নী হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন যে , ইয়া আল্লাহর রাসূল (সাঃ) , আমিও কি এই চাদরের ভেতরে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , না , তোমার জন্য অনুমতি নেই । তবে তুমি মঙ্গলের উপর আছ ।”
চাদরের নীচের এই ঘটনা সমূহ সংঘটিত হবার পরে মহান আল্লাহ বললেন , সমগ্র সৃষ্টিজগত আমি যাদের ভালবাসার জন্য সৃষ্টি করেছি সেই পাঁচজন এখন এই চাদরের নীচে একসাথে অবস্থান করছে ।
মহান এই দৃশ্য দেখে হযরত জীবরাইল (আঃ) সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকটি বিনীত প্রশ্ন করলেন যে , ইয়া দোজাহানের মালিক , ঐ চাদরের নীচে কে কে অবস্থান করছেন ?
সর্বদয়ালু আল্লাহ চাদরের নীচে অবস্থানরত সদস্যদের পরিচয় এভাবে করিয়ে দিলেন যে , ঐ চাদরের নীচে রেসালতের খনি তথা পাকপাজ্ঞতন অর্থাৎ ফাতেমার পিতা মুহাম্মাাদ , ফাতেমার স্বামী আলী এবং ফাতেমার দুই সন্তান হাসান ও হোসেন সহ সর্বমোট পাঁচজন আছেন ।
তখন হযরত জীবরাইল (আঃ) আল্লাহর নিকট বিনীত নিবেদন পূর্বক বললেন , হে আমার প্রতিপালক , আমারও কি অনুমতি আছে যে আমিও পৃথিবীতে যেয়ে তাঁদের সাথে ষষ্ঠজন হয়ে যাই ?
মহান আল্লাহ এরশাদ করলেন , যাও তোমাকে অনুমতি দিলাম ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হযরত জীবরাইল (আঃ) পৃথিবীতে এসে পাকপাজ্ঞাতনকে সালাম দিয়ে বললেন যে , আল্লাহ ও তাঁর সমস্ত ফেরেশতাকুলের পক্ষ থেকে আপনাদের উপর দরুদ ও সালাম রইল ।
ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , আপনি কি আমাকে চাদরের নীচে প্রবেশের অনুমতি দেবেন ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আল্লাহর ওহীর আমানতদার , তোমাকে অনুমতি দিলাম ।
চাদরে প্রবেশ করে হযরত জীবরাইল (আঃ) বললেন , ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ) , সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট থেকে এই ওহী নিয়ে আমি আপনাদের নিকট এসেছি –
“ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ ।
সুরা – আহযাব / ৩৩ “।
হযরত আলী (আঃ) তখন রাসুল (সাঃ) এর নিকট বিনয়ের সহিত জানতে চাইলেন যে , এই চাদরের নীচে সকলকে একত্রিত করার পিছনে কোন গুরুত্ব বা ফজিলত আছে কি ?
নবীজী (সাঃ) বললেন , অবশ্যই গুরুত্ব আছে । এই চাদরের নীচে অবস্থানকারীগনই আমার আহলে বাইত এবং আল্লাহ তাঁদের নিকট থেকে সর্বপ্রকার অপবিত্রতা বহু দূরে রেখেছেন ।
আর এই ঘটনার ফজিলত এটাই যে , এই চাদরের হাদিস বা হাদিসে কিসা দুনিয়ার যে কোন মাহফিল বা মজলিশে বয়ান করা হবে এবং ঐ মজলিশে উপস্থিত আমার অনুসারীগন বা শীয়াগনের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে এবং যতক্ষন এই হাদিসের বয়ান চলতে থাকবে ততক্ষন পর্যন্ত আসমানের ফেরেশতাগন চর্তুদিক দিক থেকে তাদের ঘিরে থাকবে এবং আমার শীয়াদের জন্য দোয়া করতে থাকবে ।
হে আলী ! আমি আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে , এই হাদিস বয়ানকারী মজলিশে উপস্থিত সকল মহব্বতকারীকে আল্লাহ সকল বিপদ বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন ।
ইমাম আলী (আঃ) তখন বললেন যে , খোদার কসম , আমি ও আমার অনুসারীগন (শীয়া) এই দুনিয়া ও আখেরাতে সফল ও কৃতকার্য হয়ে গেলাম ।
তথ্যসূত্র – আহলে সুন্নি থেকে –
সহীহ আল মুসলিম – ৭ম খন্ড , হাদিস ৬০৪৩ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল মুসলিম শরীফ -পৃ- ৯২৩ হাদিস – ৬১০৩ (মিনা প্রকাশনী) / সহীহ তিরমিযী-৬ষ্ঠ খন্ড , হাদিস ৩৮৭১, ৩৭৮৭ (ইঃ ফাঃ) / তাফসীরে মারেফুল কোরআন -৭ম খন্ড , পৃ- ১৩২ (মুফতি মোঃ সফি, ইঃ ফাঃ) / তাফসীরে মাযহারী- ১০ম খন্ড ,পৃ- ৩৩, ৩৪ (ইঃ ফাঃ) / মেশকাত- ১১তম খন্ড , হাদিস – ৫৮৭৬ (এমদাদীয়া) / শেখ আব্দুর রহিম গ্রন্থাবলী- ১ম খন্ড , পৃ- ৩০৮ (বাংলা একাডেমী) / তাফসীরে মাদানী- ৮ম খন্ড , পৃ- ১৩-১৫ (আঃ হাঃ লাইঃ) / খাসয়িসে নাসায়ী , পৃ- ৪ / মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল , ৪র্থ খন্ড , পৃ- ১৭ / মুস্তাদরাকে হাকিম , ৩য় খন্ড , পৃ- ১৪৭ / সহীহ আল মুসলিম , ৭ম খন্ড , পৃ- ১৩ / সহীহ তিরমিজি , ১২তম খন্ড , পৃ- ৮৫ / সুনানে বায়হাকী , ২য় খন্ড , পৃ- ১৪৯ / তাফসীরে দুররে মনসুর , ৫ম খন্ড , পৃ- ১৯৮ / তাফসীরে ইবনে কাসির , ৩য় খন্ড , পৃ- ৪৮৫ / তাফসীরে তাবারী , ২২তম খন্ড , পৃ- ৭ / তারীখে তাবারী , ৫ম খন্ড , পৃ- ৩১ / ইসাবা , ৩য় খন্ড , পৃ- ৪৮৯ / ইস্তিয়াব , ২য় খন্ড , পৃ- ৫৯৮ / জামেউল উসুল , ১০ম খন্ড , পৃ- ১০১ / কানজুল উম্মাাল , ৭ম খন্ড , পৃ- ১০৩ / মাজমাউল যাওয়ায়িদ , ৯ম খন্ড , পৃ- ১৬৭ / মাকতালুল খাওয়াজেমী , ২য় খন্ড , পৃ- ৬১ / মুশকিল আল আসার , ১ম খন্ড , পৃ- ৩৩৫ / মুসনাদে তাইয়ালাসি , ৮ম খন্ড , পৃ- ২৭৪ / মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন , ২য় খন্ড , পৃ- ৪১৬ / রিয়াজুন নুজরাহ , ২য় খন্ড , পৃ- ২৪৮ / তাফসীরে সালাবী , ৩য় খন্ড , পৃ- ২২৮ / তাহজিবুত তাহজীব , ২য় খন্ড , পৃ- ২৯৭ / তারিখে বগদাদ , ৯ম খন্ড , পৃ- ১২৬ / তরজমা ই ইস্তিয়ার , ৫ম খন্ড , পৃ- ৬৩৭ / তাফসীরুল উসুল , ৩য় খন্ড , পৃ- ২৯৭ / উসুদুল গাবা , ৫ম খন্ড , পৃ- ৫২১ / জাখায়িরুল উকবা , পৃ- ২৪ ।
SKL