প্রশ্ন –
ওনারা অর্থাৎ হযরত আবু বকর এবং হযরত ওমর কেন জান্নাতের সম্রাজ্ঞী মা জননী ফাতেমা যাহরা (সাঃ আঃ) এর পবিত্র গৃহকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন ?
উত্তর –
সম্মানীয় পাঠক ,
খুব খুব খুব সংক্ষেপে মূল ঘটনা বলছি ।
পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক একটি হিসাব নিকাশ ।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কতৃক অনুমোদিত নয় – সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে বনু সকীফা নামক কুখ্যাত একটি স্থানে মোহাজির ও আনসার গোত্রের কিছু পথভ্রস্ট সাহাবা বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি প্রায় তিনদিন ধরে নবী (সাঃ) এর ওফাত পরবর্তী প্রথম খলীফা হিসাবে হযরত আবু বকরকে মনোনীত ও নির্বাচিত করে ফেললেন ।
এবং তাদের এই অবৈধ মনোনয়ন বিষয় নবীবংশ তথা পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গন তথা বনু হাশীম গোত্রের বিন্দুমাত্র মতামত নেওয়া হয় নি ।
তখন নবীবংশ তথা পবিত্র আহলে বায়েত (আঃ) গন তখন নবীজী (সাঃ) এর গোসল , কাফন , জানাজা ও দাফন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ।
আর এই সুযোগে মহানবী (সাঃ) এর গোসল জানাজা , দাফন ইত্যাদি গরুত্বপূর্ন কাজ ফেলে রেখে ওনারা বনু সকীফাতে নিজেদেরকে ব্যস্ত রেখেছিলেন অবৈধ ভাবে ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ বাটোয়ারাতে !
অবৈধ এই মনোনয়নটি যখন পুরো মদীনাতে প্রকাশিত হয়ে গেল তখন নবীজী (সাঃ) এর প্রকৃত মুমিন সাহাবাদের একটি দল হযরত আবু বকরের খেলাফতকে ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করে হযরত আলী (আঃ) এর গৃহে আশ্রয় গ্রহন করেছিলেন ।
সচতুর ঝানু রাজনীতিবিদ হযরত ওমর তখন দেখলেন যে , মক্কা মদীনার সর্বশ্রেষ্ঠ বংশ হচ্ছে নবীবংশ তথা পবিত্র আহলে বায়েত তথা পাক পাজ্ঞাতন ।
হযরত আবু বকরের প্রতি যদি নবীবংশের বায়াত বা সমর্থন আদায় করা না যায় তাহলে সাধারন জনগন অচিরেই হযরত আবু বকরের অবৈধ খেলাফতের বিরুদ্বে দ্রুত সংঘটিত হয়ে যাবে ।
আবার হযরত ওমর খুব ভাল ভাবেই জানতেন যে , যেহেতু হযরত আবু বকরের খেলাফত লাভ বিষয় নবীজী (সাঃ) এর অনুমোদন নেই সেহেতু নবীবংশ কখনই বায়াত গ্রহন করবেন না ।
অতএব এক্ষেত্রে জগতের সকল স্বৈরশাসক যা করেন –
হযরত আবু বকরের পরিপূর্ন অনুমতি সাপেক্ষে ওমর ইবনে খাওাব যদি তাড়াহুড়ো না করতেন বা আগুন দেয়ার উদ্দেশ্যে গৃহের চারপাশে কাঠ যোগাড় করে হুমকি না দিতেন , তাহলে ব্যাপারটি অনেক বিলম্বিত হত এবং উম্মতের মধ্যে “আলী পন্থী ” ও “আবু বকর পন্থী ” দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ত ।
অতএব সোজা হুমকী বা বলপ্রয়োগ করে যেনতেন ভাবে নবীবংশের বায়াত আদায় করতেই হবে । নইলে হযরত আবু বকরের ক্ষমতা গ্রহন নিস্কলুষ হবে না ।
সচতুর রাজনীতিবিদ হযরত ওমর অনেক দূর পর্যন্ত ভেবে চিন্তে কথাগুলো বললেন যে , ” তোমরা গৃহ থেকে বেরিয়ে এসো , অন্যথায় গৃহের মালিকসহ সবাইকে পুড়িয়ে মারব ” ।
গৃহের মালিক দ্বারা হযরত আলী (আঃ) , মা ফাতেমা (সাঃআঃ) , হাসান (আঃ) , হোসেন(আঃ) কে বুঝিয়ে ছিলেন ।
এই হুমকীতে এক ঢিলে অনেক পাখী মারা হয়ে গেল ।
মদীনার সাধারন জনগন দেখল যে , এত বড় সর্বশ্রেষ্ঠ নবীবংশ তথা পাক পাজ্ঞাতনকে হযরত ওমর এই ভাবে শাসাতে পারে তখন ওমর অবশ্যই মহাক্ষমতাশালী ।
অতঃপর অন্য সাধারন সাহাবীদের মাঝে আর কোন ব্যক্তির সাহস থাকল না যে , তারা হযরত আবু বকরের বায়াতকে অস্বীকার করবে ।
কারন হযরত আলী (আঃ) , মা জননী ফাতেমা (সাঃআঃ) , হাসান (আঃ) , হোসেন (আঃ) এর মতো ব্যক্তিত্বকেও পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি শুধু নয় , রীতিমতো গৃহে আগুন লাগিয়ে দরজা সজোরে লাথি মেরে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল ।
শুধু দরজা ভেঙ্গে ক্ষ্যান্ত হন নি হযরত ওমর ।
জ্বলন্ত দরজাতে সজোরে লাথি মেরে নবীকন্যার গর্ভস্থ সন্তান সহ নবীকন্যাকে হত্য করা হয়েছিল ।
এবং হযরত আলী (আঃ) কে অত্যন্ত অপমানজনক ভাবে গলায় রশি বেঁধে প্রথম খলীফা বাহাদুরের দরবারে নিয়ে গিয়েও বায়াত আদায় সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছিলেন ।
পাঠক ,
অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে মূল ঘটনাটি উল্লেখ করা হল ।
প্রিয় পাঠক ,
অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতির এটাই তো স্বাভাবিক বিষয় যে , তখন হযরত ওমরের কাছে তো সৈয়দাতুল নিসায়িল আলামিন হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) এবং ওনার স্বামী হযরত আলী (আঃ) এর চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বা আসামী আর কেউ ছিল কি ?
মনটা সত্যই ভারাক্রান্ত ।
আজ আর নয় –
শুধু বিনীত অনুরোধ সকলের প্রতি যে , অযথা উত্তেজিত না হয়ে নিরপেক্ষ মন নিয়ে ইতিহাসের একজন কৌতুহুলী ছাত্র হিসাবে তৎকালীন ভয়ংকর ঘটনা সমূহ জানার চেষ্টা করি ।
ঈলাহী আমিন ।
তথ্যসূত্র –
আহলে যিকর – কে জিজ্ঞাসা করুন ,
মূল – ডঃ মুহাম্মাদ তিজানী সামাভী ,
বাংলা অনুবাদে – ইরশাদ আহমেদ ,
পৃষ্ঠা – ২৫৮ ছায়া অবলম্বনে লিখিত ।
বেলায়েতের দ্যুতি ,
মূল – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী ,
বাংলা অনুবাদে – আব্দুল কুদ্দুস বাদশা ও মোঃ মাঈনউদ্দন ,
সম্পাদনা – নূর হোসেন মজিদী ।
SKL