হযরত আবু বকরের অন্তিম সময়ের অসুস্থতা এবং
হযরত ওমর যেভাবে খলীফা নির্বাচিত হলেন —
হযরত আবু বকর তার নিজের খিলাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হযরত ওমরের কাছে যথেষ্ট ঋণী ছিলেন ।
এবং তিনি এও খুব ভাল মতই জানতেন যে , সাহাবাগনকে যদি পছন্দের স্বাধীনতা দেওয়া হয় , তবে হযরত ওমরের খলীফা হওয়ার নূন্যতম কোন সুযোগ নেই ।
সে কারনেই হযরত আবু বকর নিজেই স্বউদ্যোগী হয়ে তার উত্তরসূরী মনোনয়নের সিদ্বান্ত নেন ।
আর বলা বাহুল্য যে , এক্ষেত্রে হযরত আবু বকরের সেই পছন্দের একমাত্র ব্যক্তিটি হলেন হলেন হযরত ওমর ।
পাঠক ,
দেখুন , ইতিহাস থেকে —
আত তাবারী লিখেছেন ,
হযরত আবু বকর যখন অন্তিম শয্যায় , তিনি হযরত ওসমানকে ডেকে একটা নিয়োগপত্র বা অসিয়তনামা লিখতে আদেশ দিলেন ।
এবং তিনি বলে চললেন ,” পরম দয়ালু আল্লাহর নামে এটা মুসলমানদের প্রতি আবু বকরের নির্দেশ যে , — ” ,
এটুকু বলেই হযরত আবু বকর অচেতন বা বেহুঁশ হয়ে গেলেন ।
হযরত ওসমান তখন সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছায় ঐ অসিয়তনামায় যোগ করলেন ,
” আমি ওমর ইবনে খাত্তাবকে তোমাদের উপর আমার উত্তরসূরী নিয়োগ করিলাম । ”
তারপর হযরত আবু বকরের জ্ঞান ফিরে এলে হযরত ওসমানকে ঐ হুকুমনামাটা পড়তে বললেন ।
হযরত ওসমান তার যোগ করা লাইনটিসহ পড়লেন এবং হযরত আবু বকর অত্যন্ত খুশী হয়ে মন্তব্য করলেন , ” আল্লাহু আকবর , তোমরা বোধহয় ভয় পাচ্ছিলে যে, আমি যদি এ অবস্থায় মারা যাই , তাহলে লোকেরা নিজেদের মধ্যে মতৈক্যে আসতে পারবে না । ”
হযরত ওসমান বললেন , ” আপনি যর্থাথই বলেছেন “।
হযরত আবু বকর বললেন , ” হে ওসমান , ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করুন ” ।
সূত্র-আত তারাবী , পৃ-১২৩৮-৩৯ ।
এ প্রসংগে ইবনে আবীল হাদিদ লিখেছেন যে ,
” যখন হযরত আবু বকর চেতনা ফিরে পেলেন এবং হযরত ওসমানকে যা লিখতে বলেছিলেন তা পড়তে বললেন , যখন পড়লেন তখন হযরত আবু বকর , ওমরের নাম শুনতে পেয়ে বললেন , তুমি এটা কিভাবে লিখলে ?
হযরত ওসমান বললেন , আমি জানি আপনি ওমরকে ছাড়া অন্য কাউকে খলীফা বানাবেন না । .
তখন হযরত আবু বকর বললেন , ” তুমি ঠিকই বলেছ ” ।
সূত্র- কাতেবীনে ওহী,পৃ-৪৫৭ ইসলামিক ফাউন্ডেশন , আশারা মোবাশশারা ,পৃ-৪৮,১২৮ এমদাদীয়া , হযরত আলী,পৃ-৬৮ এমদাদীয়া , শারহা নাহাজ আল বালাঘা,খন্ড ১ ,পৃ-১৬৩ , আল কামিল ,খন্ড ২,পৃ-২৯২ , কানজুল উম্মাল ,খন্ড ৩,হাঃ ২৩৬৪ , তারিখে মদীনা ,খন্ড ২,পৃ-৬৬৭ মিশর ।
ঠিক এভাবেই নিয়োগপত্র সম্পূর্ন হল এবং হযরত আবু বকর সেটিকে সাহাবাগনের সামনে পড়ে শোনানোর নির্দেশ দিলেন ।
উক্ত অসিয়ত বা নিয়োগপত্রের মাধ্যমে হযরত ওমর খেলাফত পেলেন ।
পাঠক ,
এ প্রসংগে কিছু কথা না বললেই নয় যে , আমাদের সকলের নয়নের মনি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ওনার জীবনের শেষ মুহূর্তে একটি অসিয়তনামা লিখতে চেয়েছিলেন ।
কিন্ত দুর্ভাগ্য , ওনাকে সেই অসিয়তনামাটি লিখতে দেওয়া হয় নি ।
সেদিন মূলত হযরত ওমরের প্রচন্ড বাধার মুখে মহানবী (সাঃ) অসিয়তনামাটি লিখতে পারেন নাই ।
সেদিন হযরত ওমরের সাথে হযরত আবু বকর এবং হযরত ওসমান প্রমূখও উপস্থিত ছিলেন ।
এনারা তখন মহানবীর (সাঃ) বার্ধক্যজনিত রোগকে ” পাগল ” বা ” উম্মাাদের প্রলাপ ” বলতেও কুন্ঠিত হন নি এবং এও বলেছিলেন ,
” রাসুল (সাঃ) মৃত্যু যন্ত্রনায় পাগলের প্রলাপ বকছে এবং ” হাসবুনা কিতাবাল্লাহ ” বা আমাদের কাছে কোরআন আছে , ঐ অসিয়তনামার কোন প্রয়োজন নেই । কোরআনই আমাদের জন্য যথেষ্ট ।
দুঃখজনক এই ঘটনার পর থেকে ইবনে আব্বাস সব সময় বলতেন , হায় মুসীবত ও সমস্ত মুসীবত এটাই যে , রাসূল (সাঃ) উম্মতের জন্য কিছু লিখতে চেয়েছিলেন কিন্ত ওনাকে লিখতে দেওয়া হয়নি ।
সূত্র – সহীহ আল বুখারী ,খন্ড – ৭ , পৃ – ১২০ , হাদীস নং – ৫৬৬৯ / সহীহ আল বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ , ৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ , ৭ম খন্ড , হাদীস নং – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদীস নং – ৫১৫৪ / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদীস নং – ৪০৮৬ , ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ , ইবনে তাইমিয়া / কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় – হাল ইয়াসতাশ ফাউ ইলা আহলুজ জিম্মাাতু ওয়া মুয়ামিলাতুহুম / কিতাবুল খামিস অধ্যায় – ইখরাজুল ইয়াহুদ মিন জাযিরাতুল আরব / অধ্যায় – মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় – কাওলুল মারিযু কুমু আন্নি / কিতাবুল ইলম অধ্যায় – কিতাবুল ইলম / সহীহ বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ১ম খন্ড , পৃ – ১১৫ /
৫ম খন্ড , পৃ – ২৯ / ৭ম খন্ড , হাদিস – ৪০৭৬ / ৯ম খন্ড , হাদিস – ৫১৫৪ / সহীহ বুখারী , ৩য় খন্ড , হাদিস – ১২২৯ ( করাচী মুদ্রন ) / সহীহ বুখারীর ছয়টি স্থানে বর্নিত – কিতাবুস জিহাদ ওয়াস সায়ীর অধ্যায় / কিতাবুল খামিস অধ্যায় / মারাযুন নবী (সাঃ) ওয়া ওয়াফাতুহু / কিতাবুল মারযা অধ্যায় / কিতাবুল ইলম অধ্যায় / সহীহ মুসলিম শরীফ , ইসলামিক ফাউন্ডেশন , ৫ম খন্ড , পৃ – ৫৩ , ৫৪ , হাদিস – ৪০৮৬ – ৪০৮৮ / মিনহাজুস সুন্নাহ , ৩য় খন্ড , পৃ – ১৩৫ – ইবনে তাইমিয়া / কিতাব আল – মিলাল ওয়ান্নিহাল , বর হাশিয়াহ কিতাবুল ফাসলুল ইমাম ইবনে হাযম , পৃ – ২৩ / তোহফায় ইশনে আশারিয়া , ১০ম অধ্যায় , পৃ – ৫৯২ / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াহা , ৫ম খন্ড , পৃ – ২০৮ এবং ৭ম খন্ড , পৃ – ৩৪৬ / ইমাম হাম্বল মুসনাদ , ৪র্থ খন্ড , পৃ – ৩৭২ / জনাব আল্লামা বাহরানী (রহঃ) তার গায়াতুল হারাম নামক গ্রন্থে সুন্নী ৮৯ টি হাদিস / মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বাল , খন্ড – ৩ , পৃ – ৩৬৪ (মিশর , ১৩১৩ হিজরী ) / হাদিসে কিরতাস এবং হযরত ওমরের ভূমিকা , আব্দুল করীম মুশতাক ইত্যাদি ।
হায় আফসোস !
আজ হযরত আবু বকরও মৃত্যু শয্যায় অসিয়তনামা লেখালেন ।
কিন্ত হযরত ওসমান তো একবারও বাধা দিয়ে বললেন না যে , আবু বকর মৃত্যু যন্ত্রনায় প্রলাপ বকছেন বা আমাদের এই অসিয়তনামা দরকার নেই , আমাদের জন্য কোরআনই যথেষ্ট !
হযরত ওমর মহানবী (সাঃ) কে অসিয়তনামা লিখতেই দিলেন না ।
আর এখানে তিনি আবু বকরের অসিয়তনামাকে পবিত্র বেদ বাক্যের মতো সন্তষ্টি চিত্তে মেনে নিলেন !
কবির ভাষায় , হে বঙ্গ জননী , জন্মতো দিয়েছ কিন্ত মানুষতো করনি এখনও — !
হায় মুসলিম জনতা , আর কবে অন্তরের চক্ষু খুলিবে !
– মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত ,
সংকলন – নাজির হোসাইন ,
পৃ-১৩৯-১৪০ ছায়া অবলম্বনে ।
SKL