— ইতিহাসের লুকানো পাতা থেকে —–
বাগ এ ফিদাক জবর দখলের রাজনৈতিক কারনসমুহ –
নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) এর কাছ থেকে ফিদাক অবৈধভাবে জবর দখল কোন সাধারন ব্যাপার এবং তা শুধুমাএ অথনৈতিক ব্যাপারেই সীমাবদ্ব ছিলো , বিষয়টি এমন নয় ।
বরং রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পরপরই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারিদের কাছে এই ঘটনাটি অথনৈতিক দিক থেকে রাজনৈতিকভাবে বেশী গুরুত্ব ছিলো ।
প্রকৃত পক্ষে ফিদাক দখল একটি সূদুরপ্রসারী হীন রাজনৈতিক অপকৌশলেরই অংশ বিশেষ ছিলো ।
ইতিহাসের এই জঘন্যতম জবর দখলের কারন সমূহ নিম্নরুপ –
১) আল্লাহরই হুকুমে ফিদাক রাসুল (সাঃ) এর বংশ বা আহলে বায়েত (আঃ) এর অধীনস্থ থাকা ওনাদের জন্য একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক বৈশিষ্টের পরিচায়ক । আর এটা আল্লাহর দরবারে ওনাদের অপরিসীম মর্যাদা ও ফজিলত এবং রাসুল ( সাঃ) এর একমাত্র আপনজন বা উওরাধীকার হওয়ার সুষ্পষ্ট দলিল স্বরুপ ।
শীয়া ও সুন্নি উভয় রেওয়াত অনুযায়ী ,
“– নিকট আত্মীয়কে হক প্রদান কর — ”
এই আয়াত নাজিলের সাথে সাথেই নবীজী (সাঃ) ওনার একমাত্র কন্যা ফাতেমা যাহরা (আঃ) কে উক্ত ফিদাকের জমিটি প্রদান করেন ।
এটা খুবই স্বাভাবিক যে , ঐতিহ্য সমৃদ্ব ফিদাক ভূ খন্ড যদি আহলে বায়েত (আঃ) এর অধীনস্থ থাকতো , তাহলে সাধারন জনগন ওনাদের অন্যান্য নিদেশনাবলী বিশেষত , খেলাফত বা ইমামত উক্ত পরিবারের মাঝেই সন্ধান করতো । আর এই বিষয়টিই খেলাফত অধিগ্রহনকারিদের নিকট অসহনীয় ছিলো ।
২) এ বিষয়টি অথনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকেও যথেষ্ট গুরুত্ববহ ছিলো । এবং সেই সাথে তা সুদূর রাজনীতির উপর বিশেষ প্রভান্বিত ছিলো । কেননা , ইমাম আলী (আঃ) ও ওনার পরিবারজন যদি কঠিন আর্থিক দৈন্যতার শিকার হতেন , তবে সে অনুপাতে ওনাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিওি দূর্বল থাকতো ।
পক্ষান্তরে , ফিদাক যদি ওনাদের আয়ত্বাধীন থাকতো , তবে ওনারা বেলায়েত তথা উওরাধীকার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিরক্ষার ক্ষেএে বিশেষ সুবিধাদি পেতেন । সাধারন জনগনও ওনাদের কাছে সাহায্য সহযোগিতার ব্যাপারে মুখাপেক্ষি থাকতো ।
ঠিক যেমনিভাবে রাসুলের (সাঃ) নবুয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ের কঠিন দিনগুলোতে হযরত খাদিজার (রাঃ) বিপুল ধন সম্পদ ইসলাম প্রচারের ক্ষেএে বিশেষ অবদান রেখেছিলো ।
আজকে সারা পৃথিবীতে যেই ইসলাম নিয়ে আমরা গর্বিত সেই ইসলাম কিন্ত ফাতেমা (আঃ ) এর পবিত্র মাতা খাদিজা (রাঃ) এর ধন সম্পদেরই অবদান ।
পৃথিবীর সর্বত্র নিয়ম প্রচলিত যে , যখন কোন বিশেষ ব্যক্তিত্ব বা কোন দেশকে কোনঠাসা করার প্রয়োজন হয় , তখন তার উপর অথনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ।
উদাহরনস্বরুপ , ইসলামের ইতিহাসে শোবে আবু তালিবের ঘটনা এবং মুসলমানদের উপর মক্কার মুশরিকদের চাপিয়ে দেওয়া কঠিন অথনৈতিক অবরোধ ।
ঠিক এই রকম ন্যাক্কারজনক কাজটিই ওরা করেছিলো সেই সময় আহলে বায়েত (আঃ) এর প্রতি ।
উদ্দেশ্য ছিলো একটিই , অথনৈতিকভাবে ওনাদেরকে কোনঠাসা বা দূর্বল করে রাখা ।
এক্ষেত্রে সত্যিই কি অপূর্ব মিল , মক্কার সেই কাফের মুশরিকগন আর বনু সকিফার বড়ো বড়ো সব নেতাদের সাথে !
৩) আর যদি তারা সত্যিই ফাতেমা (আঃ) এর ন্যায সম্পতি ওনাকে ফিরিয়ে দিতো , তবে সেক্ষেত্রে খেলাফত বা ইমামতের ন্যায দাবিও উথ্তাপিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতো ।
সুতরাং এ বিষয়টি পরিষ্কার , রাসুলের (সাঃ) ওফাতের পর যারা বনু সকিফাতে মিলিত হয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে তারা খুবই ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবেই এই রকম জঘন্য একটা কাজ করেছে শুধুমাএ ইহকালীন ক্ষমতার মোহের বশবতী হয়ে ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
আজ আর নয় । সব কিছুই আবার নতুন করে দেখা ও চিন্তা করতে শিখুন ।
আল্লাহপাক বোধহয় এইজন্যই পবিত্র কোরআনে বার বার অতীতের ইতিহাস টেনে এনেছেন ।
কথায় আছে , অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যত গড়ো ।
আপনি অবশ্যই যথেষ্ট বিবেকবান বুদ্ধিসম্পন্ন একজন মানুষ ।
— নারীকুলের শিরোমনি হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) —
অনুবাদ , মিজানুর রহমান –
পৃষ্ঠা ৯৬- ৯৯ ছায়া অবলম্বনে ।
SKL