নিশ্চয়ই, আমরা ও তোমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম যা তুমি নিজেই বলে থাক। কিন্তু কদিন থেকেই তোমাদের সাথে আমাদের সে সম্পর্কে ছিড় ধরেছে। কারণ আমরা ইমান এনেছি। আর তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছো। আজ অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আমরা ইমানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আর তোমরা ফেতনা সৃষ্টিকারী। তোমাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে তারা অনিচ্ছাসত্ত্বেই তা করেছে। তাও আবার যখন সকল গোত্রের নেতাগণ ইসলাম গ্ৰহণ করে আল্লাহর নবির সঙ্গে যোগদান করেছে। তারপর তোমরা ইসলাম গ্ৰহণ করেছো । তোমার পত্রে তুমি উল্লেখ করেছে যে, আমি তালহা ও জুবায়রকে হত্যা করেছি এবং আয়শাকে জোরপূর্বক তার ঘর থেকে বের করে দিয়ে কুফা ও বসরার মধ্যবর্তী স্থলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছি’। এসব বিষয়ে তোমার মাথা ঘামাবার কিছুই নেই। তারাও তোমার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলে নি। সুতরাং তাদের ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকার তোমার নেই। তুমি আরো লেখেছো যে, তুমি একদল মুজাহির ও আনসার নিয়ে আমার কাছে আসছো । তোমার মনে রাখা উচিত যে, যেদিন তোমার ভাই বন্দি হয়েছিল সেদিন থেকেই হিজরত সমাপ্ত হয়ে গেছে। কাজেই মুহাজির ও আনসার আর কেউ নেই। যদি তুমি ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাক তবে একটু অপেক্ষা কর যাতে আমি তোমার মোকাবেলা করতে পারি এবং সেটা খুব মানান সই হবে। কারণ তাতে বুঝা যাবে তোমাকে শাস্তি দেয়ার জন্যই আল্লাহ আমাকে মনোনীত করেছেন। কিন্তু তুমি আমার কাছে যদি আস তা হবে। আমাদের কবির কবিতার মন্তব্য ঃ তারা গ্রীষ্ম বাতাসের উল্টো দিকে অগ্রসর হচ্ছে, যে বাতাস তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করছে এবং কী নিচু ভূমি আর উচু ভূমি তারা পাথরের আঘাত পাচ্ছে । মনে রেখো, যে তরবারি দিয়ে আমি তোমার দাদা, মামা ও ভ্রাতাদেরকে দ্বিখণ্ডিত করেছি তা আজো আমার কাছে আছে। আল্লাহর কসম, তুমি যে কি প্রকৃতির তা আমি ভালোভাবে জানি। তোমার হৃদয় নিচ এবং সুবুদ্ধিতে তুমি দুর্বল। একথা বলা ভালো যে, তুমি যে স্থানে আরোহণ করেছে। সেখান থেকে শুধুমাত্র মন্দ দৃশ্য দেখতে পােচ্ছ, যা তোমার বিরুদ্ধে— পক্ষে নয়। কারণ অন্যের হারানাে বস্তু তুমি খুঁজছো। অন্যের পশুর পাল খুঁজতে তুমি ঝুকে পড়েছে। তুমি এমন জিনিসের প্রতি লোভাতুর হয়ে পড়েছে যা তোমার নয় এবং যাতে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। তোমার কাজে আর কথায় কতই না ব্যবধান এবং এ বিষয়ে তুমি তোমার বাপ-চাচা ও মামাদের কতই না কাছের যারা অসৎ প্রকৃতি দ্বারা তাড়িত ছিল এবং মুহাম্মদের (সঃ) বিরোধিতার পাপের প্রতি কতই আকৃষ্ট ছিল। ফলশ্রুতিতে তাদের হত্যা করা হয়েছিল যা তুমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছে। তাদের ওপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তখন তারা আত্মরক্ষার কোন পথ খুঁজে পায় নি এবং আমার তরবারির আঘাত থেকে নিরাপদ স্থানে পালাতে পারে নি। সে তরবারি। আজো দুর্বল হয়ে পড়ে নি।
উসমানের হত্যা সম্বন্ধে তুমি অনেক কিছু লেখেছো । তুমি প্রথমে অন্যান্য মানুষের মতো বায়াত গ্রহণ করা। তারপর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আমার কাছে রায় চাও এবং তখন আমি মহামহিম আল্লাহর কুরআন মতে তোমার ও তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেব। কিন্তু যা তুমি লক্ষ্যস্থির করেছে তা এমন যেন মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধের পর শিশুর মুখে প্রথম কদিন আলগা নিপল; যারা শান্তি পাওয়ার যোগ্য তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক ।
১। মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের কাছে একটা পত্র লেখেছিল। তাতে সে পারস্পরিক ঐক্য ও সমঝোতার কথা উল্লেখ করে তালহা ও জুবায়রের হত্যা, আয়শাকে ঘর হতে বহিস্কার করা এবং মদিনা থেকে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করার বিষয়ে আমিরুল মোমেনিনকে দোষারোপ করে। সর্বশেষে মুহাজির ও আনসার নিয়ে সে যুদ্ধের হুমকি দেয়। প্রত্যুত্তরে আমিরুল মোমেনিন এ পত্র লেখেন। এতে উভয়ের ঐক্য ও সমঝোতার বিষয়ে তিনি লেখেছেন যে, ইসলাম প্রচারের সাথে সাথে তারা (উমাইয়্যগণ) রাসুলের (সঃ) ঘোর বিরোধিতা শুরু করেছিল। অপরপক্ষে হাশেমিগণ ইসলাম গ্রহণ করে রাসুলকে (সঃ) তার মিশনে সহায়তা করেছে। আরবের দলপতি যখন তাদের দলবলসহ রাসুলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল তখনও উমাইয়াগণ তার বিরোধিতায় তৎপর ছিল। মক্কা বিজয়ের পর তারা অনন্যেপায় হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে। মূল ব্যবধানটা এখানেই যে, হাশেমিগণ স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে আর উমাইয়াগণ প্ৰাণ বাচানোর জন্য ইসলাম গ্ৰহণ করেছে। এ নৈতিক ব্যবধান কখনো দূর হবার নয়। কারণ উমাইয়াগণ কখনো হৃদয় দিয়ে ইসলামকে বা রাসুল (সঃ) ও তার আহলুল বাইতকে ভালোবাসে নি। তালহা ও জুবায়রের হত্যার জন্য মুয়াবিয়া আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যা উদ্ভাবন করেছে তা যদি সত্য বলেও ধরা হয় তা হলে কি একথা বাস্তব ভিত্তিক নয় যে, তারা উভয়ে বায়াত ভঙ্গ করে আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে যুদ্ধ করেছিল? সুতরাং বিদ্রোহ দমন করতে তারা নিহত হলেও হত্যকারীদের দোষারোপ করা যায় না। কারণ ন্যায়সঙ্গত ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের শাস্তি হলো মৃত্যু। তাসত্ত্বেও আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বাস্তব ভিত্তিক নয় কারণ তালহা ও জুবায়রকে তার নিজের লোকেরাই হত্যা করেছে। ঐতিহাসিকগণ লেখেছেনঃ মারওয়ান ইবনে হাকাম তালহাকে তীর বিদ্ধ করে এবং আবান ইবনে উসমানের দিকে ফিরে বলেছিল, “আমরা তোমার পিতার হত্যাকারীকে নিহত করেছি এবং তোমাকে প্রতিশোধ নেয়ার দায় থেকে মুক্ত করেছি” ( ༦༠༢, ७:२७, १६ ×s; আইরিশ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৪৪, বার’, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭৬৬-৭৬৯; হাজর***, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৩০; আসকালানী’, ৫ম খণ্ড, / (دئ-oئ g? ,ئ/* /?و ,نټiچ// ;رډ g? আমর ইবনে জুরমুজ নামক একজন লোক বসরা থেকে ফিরে যাবার পথে জুবায়রকে হত্যা করেছিল। এতে আমিরুল মোমেনিনের কোন প্রকার নির্দেশ বা ইঙ্গিত ছিল না। একইভাবে আয়শা নিজেই বিদ্ৰোহী দলের নেত্রী হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আমিরুল মোমেনিন বহুবার তাকে তার মৰ্যদার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপদেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি তার সীমানা ছেড়ে না যান। কিন্তু তিনি সে উপদেশে কর্ণপাত করেন নি। মদিনা থেকে মন্দ লোক ও ময়লা আবর্জনা দূরীভূত হয়েছে। এর একমাত্র জবাব হলো মুয়াবিয়া সর্বদা মদিনা থেকে সরে রয়েছে এবং সিরিয়ায় থেকেছে। প্রকৃত অবস্থা হলো জামাল যুদ্ধে বহু সংখ্যক লোক কুফা থেকে আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে যোগদান করেছিল। এতে তিনি অনুভব করলেন যে, চারদিকের বিদ্রোহ দমনের জন্য সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে কুফায় তাঁর অবস্থান অধিকতর ভালো হবে। তাই তিনি মদিনা থেকে কুফায় রাজধানী স্থানান্তর করেছিলেন।
সর্বশেষে, আনসার ও মুহাজির নিয়ে আক্রমণের হুমকির প্রেক্ষিতে আমিরুল মোমেনিন বললেন যে, মক্কা বিজয়ের কালে মুয়াবিয়ার ভাই ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান বন্দী হয়েছিল। কাজেই সে দিন থেকেই হিজরতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। রাসুল (সঃ) বলেছেন যে, “মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত থাকবে না। হিজরত বন্ধ হবার পর মুহাজির আর আনসারের প্রশ্ন উঠে না।