সিফফিনে” শত্রুর সাথে যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে সেনাবাহিনীকে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন।
শত্রুপক্ষ আঘাত হানার পূর্ব পর্যন্ত তোমরা আঘাত করো না। কারণ আল্লাহর অসীম রহমতে, তোমরা ন্যায়ের পথে রয়েছে এবং তারা যুদ্ধ শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিলে তা তোমাদের পক্ষে আরো একটা পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াবে। ইনশাল্লাহ, যদি শত্রুপক্ষ পরাজিত হয় তবে তাদের মধ্যে যারা পলায়নপর তাদেরকে হত্যা করো না, অসহায় কোন ব্যক্তিকে আঘাত করো না এবং আহতগণকে একেবারে শেষ করে দিয়ে না। কোন রমণী যদি তোমাদের সম্মান ক্ষুন্ন করে নোংরা কথা বলে বা তোমাদের অফিসারকে গালি দেয়। তবুও তাদেরকে কষ্ট দিয়ে না। কারণ জ্ঞানে, মনে ও চরিত্রে তারা তোমাদের চেয়ে দুর্বল। (রাসুলের যুগে) তারা অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তাদের ওপর আপতিত না হবার জন্য আমাদেরকে আদেশ দেয়া হতো। এমনকি আইয়ামে জাহেলিয়াতেও যদি কোন পুরুষ কোন নারীকে পাথর অথবা ছড়ি দিয়ে আঘাত করতো। তবে তার চৌদ-পুরুষসহ তাকে গালাগালি করা হতো।
১। সিফফিনের যুদ্ধ আমিরুল মোমেনিন ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধের জন্য মুয়াবিয়া এককভাবে দায়ী। কারণ সে উসমানের হত্যার জন্য আমিরুল মোমেনিনকে মিথ্যা দোষারোপ করে যুদ্ধ সংঘটিত করেছিল। প্রকৃতপক্ষে কে বা কারা এবং কী কারণে হত্যা করেছিল তা মুয়াবিয়ার অজানা ছিল না। সে তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য উসমানের রক্তের বদলা নেয়ার ধুয়া তুলে বিদ্রোহ ও যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু শরিয়তের বিধান মতে মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত সত্যের অনুসারী ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অবৈধ, যেমনশাসনকার্যে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না । তাদের কোন কার্য ইসলাম বিরোধী, এটা নিশ্চিত না হয়ে তাদের কাজে বাধার সৃষ্টি করো না । যদি তোমার দৃষ্টিতে তাদের কোন কাজ মন্দ বলে মনে হয় তবে সে বিষয়ে সত্য কথা বলে দিয়ো; কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে উত্থান বা যুদ্ধ ঘোষণা মুসলিমদের ইজমায় নিষিদ্ধ (নাওয়াব’, ২য় খন্ড, পৃঃ ১২৫, বাকিলানী”, পৃঃ ১৮৬ তাফতাজনী”, ২য় খন্ড, ? २१२) / মুসলিমদের ঐকমত্যে প্রতিষ্ঠিত কোন ইমামের বিরুদ্ধে যে কেউ বিদ্রোহ করে সে সত্যত্যাগী খারিজি বলে পরিচিত হবে / সাহবিদের যুগে এটা প্রচলিত ছিল এবং তাদের পরেও একথা প্রযোজ্য (শাহরাস্তানী***, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৪) { এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুয়াবিয়ার কর্মকান্ড ছিল আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে উত্থান ও তাঁর বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করা। একজন বিদ্রোহীর অগ্রগতি প্রতিরোধ করার জন্য অস্ত্ৰধারণ করা শান্তির পরিপন্থী কিছু নয়। বরং এটা মজলুমের স্বাভাবিক অধিকার। এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করলে জুলুম ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিহত করার এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আর কোন পথ খোলা থাকবে না। সে কারণেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করার অনুমতি আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ যদি বিশ্বাসীগণের দুন্দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তবে তোমরা তাদের উভয় দলের মধ্যে মীমাংসা করে শক্তি স্থাপন করে দেবে; কিন্তু যদি তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করে। তবে তোমরা সকলে মিলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে না আসে-যদি তারা ফিরে আসে। তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত মীমাংসা করে দিয়ো এবং এতে সুবিচার করো । নিশ্চয়ই, আল্লাহ সুবিচারকারীকে ভালোবাসেন (?: GIF-85 8 5) | এ কারণেই আমিরুল মোমেনিন—“আল্লাহর ফজলে তোমরা ন্যায়ের পথে আছো|”—মর্মে দাবি করেছিলেন। তাসত্ত্বেও তিনি তাঁর সৈন্যবাহিনীকে উপদেশ দিয়েছিলেন যেন তাদের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সূচনা না হয়। কারণ তিনি শুধু আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। কিন্তু যখন শান্তি-শৃংখলার জন্য তাঁর সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো এবং শত্রু কোন কথা না শুনে যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে গেল তখন জুলুম ও স্বেচ্ছাচারিতা প্রতিহত করার জন্য তাদের মোকাবিলা করা তার দায়িত্ব হয়ে পড়েছিল যা মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে অনুমোদন করেছেনঃ
যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, কিন্তু সীমা লঙ্ঘন করো না । আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না (2:f SliიI—ა ჭ აპაo) | এ ছাড়াও আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মানেই হলো রাসুলের (সঃ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ হে আলী, তোমার শক্তিই আমার শক্তি, তোমার যুদ্ধই আমার যুদ্ধ (হাদীদ’, ১৮শ খন্ড, is &8)
এ কারণে রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপরাধে যে শাস্তি প্ৰাপ্য আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে একই শাস্তি পাবার যোগ্য। রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবার শাস্তি মহান আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেনঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের শাস্তি হলো।— তাদের হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশ বিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে । ইহকালে এটাই তাদের শাস্তি এবং পরীকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি (?: GIF-( 8 99) | এরূপ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পলায়নোনুখ ও আহত শক্রকে হত্যা না করার জন্য আমিরুল মোমেনিন তাঁর সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁর এহেন নির্দেশ নৈতিক মূল্যবোধ ও জিহাদের একটি মহোত্তম নিদর্শন। এ নির্দেশ তিনি শুধু মুখে বলেন নি লেখেও দিয়েছেন। বস্তুতঃপক্ষে যুদ্ধে পলায়নপর ও অসহায় শত্রু এবং নারী হত্যা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। জামালের যুদ্ধে তাঁর শত্রুপক্ষের নেতৃত্বে নারী থাকা সত্ত্বেও তিনি নীতি পরিবর্তন করেন নি। পরাজিত হবার পর তিনি আয়শাকে দেহরক্ষী দ্বারা মদিনা প্রেরণ করেন। এ বিষয়ে হাদীদ’ (১৭শ খন্ড, পৃঃ ২৫৪) লেখেছেনঃ আমিরুল মোমেনিনের সাথে আয়শা যেরূপ আচরণ করেছে উমরের সাথে যদি সেরূপ আচরণ করা হতো তাহলে জয়লাভের পর উমর তাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতো ।