আমিরুল মোমেনিনের দূরদর্শিতা এবং তাঁর ইমানের দৃঢ় প্রত্যয় সম্পর্কে
তোমাদের অন্ধকার যুগে আমাদের কাছ থেকে হেদায়েত লাভ করে তোমরা আলোর পথ দেখতে পেয়েছে এবং তোমরা উচ্চ মর্যাদা লাভ করেছো। আমাদের দ্বারাই তোমরা অন্ধকার রাত থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছো। যে কান কান্নার শব্দ শুনতে পায় না তা বধির হয়ে গেছে। কুরআন ও রাসুলের কান্নায় (কুরআন ও সুন্নাহ্ পরিত্যাগের কারণে) যে ব্যক্তি বধির রয়ে গেল সে কী করে আমার ক্ষীণ স্বর শুনতে পাবে? যে হৃদয় আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয় সে প্রশান্তি প্রাপ্ত হবে।
আমি সর্বদা শঙ্কিত থাকি তোমাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিণতির জন্য এবং আমি ধোকাবাজাদের চাকচিক্যে তোমাদের জড়িয়ে পড়তে দেখেছিলাম। দ্বিনের পর্দা তোমাদের কাছ থেকে আমাকে গোপন করে রেখেছিল। কিন্তু আমার নিয়্যতের বিশুদ্ধতা তোমাদের সব কিছু আমার কাছে ফাঁস করে দিল । তোমরা বিপথে চলে গেলে অথচ আমি তোমাদের জন্য সত্য পথে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে যখন তোমরা রাস্তার সন্ধান করছিলে তখন কোন পথ প্রদর্শক ছিল না। ফলে তোমরা কূপ খনন করেছে। সত্য, কিন্তু একটুও পানি পাও নি।
আজ আমি যেসব মুক জিনিসকে (অর্থাৎ আমার সুচিন্তিত সুপারিশসমূহ ও গভীর বেদনাগাথা) তোমাদের সাথে কথা বলাচ্ছি তা নিদারুণভাবে উপেক্ষিত হয়েছিল। যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার মতামত বা অভিমত ধ্বংস হয়ে যায়। যখন থেকে আমাকে সত্য দেখানো হয়েছে তখন থেকে আমি কখনো সত্যের প্রতি সন্দিহান হই নি। মুসা” নিজের জন্য ভীত বিহ্বল হন নি; বরং তিনি অজ্ঞদের পথভ্রষ্টতার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। আজ আমরা সত্য ও অসত্যের মিলন স্থলে উপনীত। কেউ পানি পাবার বিষয়ে নিশ্চিত হলে তৃষ্ণ-কাতর হয় না।
১। আমিরুল মোমেনিন এ খোৎবায় মুসার ভয় পাবার বিষয়টি এজন্য বলেছেন যে, যখন যাদুকরগণকে মুসার মোকাবেলা করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল তখন তারা দড়ি ও লাঠি মাটিতে নিক্ষেপ করে যাদুবিদ্যা দেখাতে লাগলো। এতে মুসা ভীত হয়ে গেলেন। কুরআন বলেনঃ মুসার মনে হলো যাদুর প্রভাবে এগুলো (দাড়ি ও লাঠি) ছুটী ছুটি করছে । মুসার অন্তরে একটু ভয়ের সঞ্চার হলো আমরা বললাম, ভয় করো না | নিশ্চয়ই তুমিই প্রবল (২০:৬৬-৬৮) || আমিরুল মোমেনিন বলেন যে, মুসার ভয়ের কারণ এ ছিল না যে দড়ি ও লাঠির ছুটাছুটিতে তিনি জীবনের আশঙ্কা করেছিলেন; বরং তার ভয়ের কারণ ছিল পাছে মানুষ যাদুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধ্বংস হয়ে যায় এবং এ কৌশলে মিথ্যা ও অলীক প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়ে। এ কারণেই কুরআনে মুসার জীবন রক্ষার সান্তুনা বাণী না শুনিয়ে বলা হয়েছে যে, তিনিই শ্রেষ্ঠ হিসাবে প্রমাণিত হবেন এবং তার দাবিই টিকে থাকবে। মুসার ভয় যেমন ছিল সত্যের পরাজয় ও মিথ্যার বিজয় সম্পর্কে, তার নিজের জীবনের জন্য নয়; তেমনি আমিরুল মোমেনিনের ভয় ছিল সেসব লোকের (তালহা, জুবায়র, মুয়াবিয়া ইত্যাদি) ফাঁদে আটকা পড়ে মানুষ যেন ইমান হারিয়ে বিপথগামী হয়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। অন্যথায় তিনি নিজের জীবনের ভয়ে কখনো ভীত ছিলেন না।