আল্লাহকে ভুলে থাকা সম্বন্ধে আমিরুল মোমেনিন কুরআনের নিম্নের আয়াত তেলাওয়াত করলেনঃ হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহান রব সম্বন্ধে বিভ্রাক্ত করলো । তারপর আমিরুল মোমেনিন বলতে লাগলেনঃ
এ আয়াতে যাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে তাদের কোন যুক্তি থাকতে পারে না এবং তাদের ওজর খুবই প্রতারণাপূর্ণ। তারা নিজেদেরকে অজ্ঞতার মাঝে নিমজ্জিত করে রেখেছে। হে মানুষ! কিসে তোমাদেরকে এত সাহসী করে তুলেছে যে, তোমরা পাপে লিপ্ত হও; কিসে তোমাদের আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদেরকে প্রতারণা করেছে; নিজেদের ধ্বংসে কিসে তোমাদেরকে আনন্দ দান করছে? তোমাদের রোগের কি কোন চিকিৎসা নেই? তোমাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার কি কিছুই নেই? অন্যদের প্রতি তোমাদের যেরূপ দরদ রয়েছে নিজেদের প্রতি কি তোমাদের সেরূপ দরদ নেই? সাধারণত কাউকে রৌদ্রতাপে দেখলে তোমরা তাকে ছায়া দ্বারা ঢেকে দাও অথবা কাউকে বেদনাকাতর বা শোকাহত দেখলে তার প্রতি মমত্ববোধের কারণে নিজেরা কেঁদে ফেল। নিজেদের রোগের ব্যাপারে কিসে তোমাদেরকে ধৈৰ্য্যশীল করেছে? কিসে তোমাদেরকে নিজেদের দুর্দশায় দৃঢ়চিত্ত করে রাখলো? তোমার নিজের জীবন তোমার কাছে অন্য যে কোন জীবন হতে মূল্যবান হওয়া সত্ত্বেও কিসে তোমাদেরকে নিজের জীবনের জন্য ক্ৰন্দনে বারিত করলো? রাত্রিকালে তোমাদের ওপর মারাত্মক বিপৰ্যয় নেমে আসতে পারে — এ ভয়ে কেন তোমরা জাগরিত থাক না? তোমাদের পাপের কারণে তোমরা আল্লাহর রোষের পথে শুয়ে থাক—এ কথা কি তোমরা বুঝি না? তোমাদের হৃদয়ের অসাড়তার রোগ দৃঢ়সংকল্প দ্বারা চিকিৎসা কর এবং গাফলতির নিদ্ৰা চোখের জাগরণ দ্বারা চিকিৎসা কর। আল্লাহর প্রতি অনুগত হও এবং তার জেকেরকে ভালোবাস। সর্বদা মনে রেখো, তিনি তোমাদের দিকে এগিয়ে আসেন আর তোমরা দৌড়ে পালিয়ে যাও। তিনি তার ক্ষমার দিকে তোমাদেরকে আহবান করছেন এবং তার পরম দয়ার কারণে তোমাদের অপরাধ গোপন করে রখেছেন, আর তোমরা তার দিকে না গিয়ে অন্যদের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বশক্তিমান ও পরম করুণাময়। তোমরা কতই না দুর্বল ও হীনাবস্থা সম্পন্ন, অথচ তার নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করে এবং তাঁর অসীম দয়ার মধ্যে জীবনের পরিবর্তনসমূহ অতিক্রম করেও কী করে তার অবাধ্য হতে সাহস কর? তিনি তোমাদের ওপর থেকে তার নিরাপত্তা ও দয়া কখনো সরিয়ে নেন না। বস্তুত তাঁর দয়া ব্যতীত একটি মুহুৰ্তও তোমরা থাকতে পার না— হতে পারে এটা তার কোন নেয়ামত যা তিনি তোমাদেরকে দান করছেন অথবা কোন পাপ যা তিনি গোপন করে রেখেছেন অথবা কোন দুৰ্যোগ যা তিনি তোমাদের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। যদি তোমরা তাঁর আনুগত্য করতে তাহলে তাঁর সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কেমন হতো? আল্লাহর কসম, এ অবস্থা যদি এমন দুব্যক্তির মধ্যে হতো। যারা ক্ষমতায় ও শক্তিতে সমান (একজন অমনোযোগী ও অপরজন তোমাদের ওপর নেয়ামত বর্ষণ করেই যাচ্ছে) তাহলে তোমরা নিজেরাই তোমাদের অসদাচরণ ও মন্দকাজগুলো সাব্যস্ত করতে পারতে । আমি সত্যিকারভাবে বলছি যে, দুনিয়া তোমাদেরকে প্রতারণা করে নি— তোমরা নিজেরাই এর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে । দুনিয়া তোমাদের প্রতি পর্দা উন্মোচন করে রেখেছে এবং সবকিছু সমভাবে ফাঁস করে রেখেছে। তাসত্ত্বেও তোমাদের ওপর সংঘটিতব্য বিপদ ও তোমাদের ক্ষমতার ধ্বংসের কথা পূর্বাহ্নেই বলে দেয়া হয়েছে। দুনিয়া তার কথায় অতি সত্যবাদী, প্রতিশ্রুতির প্রতি বিশ্বস্ত, মিথ্যা কথা বলে নি বা তোমাদেরকে প্রতারণাও করে নি। অনেকেই তোমাদেরকে দুনিয়া সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছে কিন্তু তোমরা তাদেরকে দোষারোপ করেছে; অনেকেই দুনিয়া সম্পর্কে তোমাদেরকে সত্য কথা বলেছে কিন্তু তোমরা তাদের বিরোধিতা করেছে। জীৰ্ণ কুটির ও অবহেলিত বাসস্থান দ্বারা যদি তোমরা দুনিয়াকে বুঝ। তবে তোমাদের বুঝ সমঝ ও শিক্ষা গ্রহণের সুদূরপ্রসারী ক্ষমতা দ্বারা দেখতে পাবে যে, এটা এমন একজনের মতো যে তোমাদের প্রতি দয়াবান ও তোমাদেরকে সতর্ক করে দেয়। যে ব্যক্তি দুনিয়াকে আবাসস্থল হিসাবে পছন্দ করে না তার জন্য এটা উত্তম আবাসস্থল। যে ব্যক্তি দুনিয়াকে বসবাসের
স্থায়ী আবাস মনে করে না তার জন্য এটা উত্তম বাসস্থান। যারা আজ দুনিয়া থেকে দৌড়ে পালায় তারাই আগামীকাল দ্বিনদার বলে বিবেচিত হবে। ভূমিকম্প সংঘটিত হলে, কেয়ামত এসে পড়লে প্রতিটি ইবাদত স্থানের মানুষ উহার সাথে থাকবে, প্রত্যেক আসক্ত ব্যক্তি তার আসক্তির বস্তুর সাথে থাকবে এবং প্রত্যেক অনুসারী তার নেতার সাথে থাকবে। সেদিন চোখের প্রতিটি উনিলেন ও প্রতিটি পদশব্দ আল্লাহর ন্যায় বিচারের মাধ্যমে যতটুকু প্ৰাপ্য হবে ততটুকু পাবে। সেদিন অনেক যুক্তি ও ওজর নাকচ হয়ে যাবে। সুতরাং তোমরা এখনই এমন পথ অবলম্বন করা যাতে তোমাদের যুক্তি প্রমাণিত হয় এবং ওজর
গৃহীত হয়। এ দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী বস্তু থেকে সেটুকু গ্ৰহণ করা যেটুকু পরকালে তোমাদের জন্য থাকবে, তোমাদের যাত্রার রসদ হবে, মুক্তির উজ্জ্বলতা আনবে এবং তোমাদের দুঃখ উপশমের জন্য প্রস্তুত থাকবে ।