ইদানীং অামাদের অনেক সু্ন্নি ভাই অজ্ঞতায় হোক বা মাযহাবগত বিদ্বেষবশত ভাবে হোক – একটি কথা প্রায়ই বলে থাকেন যে , কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসেন (আঃ) কে শীয়ারা হত্যা করেছিল । এখন শীয়ারা সেই অনুতাপে বুক চাপরিয়ে মাতম করে পূর্বের পাপের প্রায়াশ্চিত্ত করে ।
সেইসাথে ভয়ংকর টাটকা ডাঁহা একটি মিথ্যা কথা বাজারে ছাড়া হচ্ছে যে , কারবালা হত্যাযজ্ঞ সম্বন্ধে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া কিছুই জানত না । কারবালা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল ঈয়াযীদর নিয়োগ দেওয়া গর্ভনর নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ । কারবালা নির্মম হত্যাকান্ডের সংবাদ শুনে ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া খুবই কান্নাকটি এবং দুঃখ প্রকাশ করেছিল !
বেশ ভাল কথা । প্রতিটা মানুষ স্বাধীনভাবে যে কোন কথা বলতেই পারেন । হোক সেটা সত্য অথবা টাটকা ডাঁহা মিথ্যা ! যাইহোক , যে সকল সুন্নি ভাইরা হরহামেশা এ কথাটি বলে থাকেন , তাদের নিকট বিনীত ভাবে কয়েকটি প্রশ্ন রইল ।
আশ করি , যৌক্তিক জবাব পাব ।
প্রশ্ন – ১) –
ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া মদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে ওকবাকে যে কোন মূল্যে ইমাম হোসেনের (আঃ) বাইআত গ্রহন অন্যথায় হত্যার আদেশ দিয়েছিল কেন ?
প্রশ্ন – ২) –
ইমাম হোসেন (আঃ) কে গুপ্তহত্যার জন্য হজ্ব চলাকালীন সময় মক্কাতে কেন গুপ্তঘাতক প্রেরন করেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ?
প্রশ্ন – ৩) –
কারবালা তথা কুফা নগরীতে সর্বপ্রথম শহীদ মুসলিম বিন আকিলের পৈচাশিক হত্যার বিচার ঈয়াযীদ কেন করে নাই ?
প্রশ্ন – ৪) –
উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে তখন ঈয়াযীদ কেন কুফার গর্ভনর নিয়োগ করে পাঠিয়েছিল ?
প্রশ্ন – ৫) –
কারবালা প্রান্তরে মাত্র ১১০ জনের মহিলা শিশু সহ কাফেলার বিরুদ্বে প্রায় তিরিশ হাজার বিশাল রাজকীয় সৈন্যের বহর কার হুকুমে এবং কেন জড়ো হয়েছিল ?
প্রশ্ন – ৬) –
কারবালার ময়দানে যারা হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে তারা যদি শীয়া হয় তাহলে কেন সেই সকল শীয়া হত্যাকারীগনকে বিচারের আওতায় আনে নি , ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া ?
প্রশ্ন – ৭) –
বিচার করা তো দূরের কথা , কেন সেই সকল হত্যাকারীগনকে ঈয়াযীদ খলীফার দরবার থেকে লক্ষ লক্ষ দিরহাম পুরস্কার দেয়া হল ?
প্রশ্ন – ৮) –
কারবালা হত্যাযজ্ঞের পরে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদের কোন বিচার করা তো দূরের কথা ! ইমাম হোসেন (আঃ) কে হত্যার পরেও উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে কুফার গর্ভনর হিসাবে বহাল রেখেছিল ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া । এই জঘন্য হত্যাযজ্ঞের কয়েক মাস পর উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ সিরিয়ায় গিয়ে ঈয়াযীদের সাথে দেখা করলে ঈয়াযীদ পরম খুশীমনে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে আলিঙ্গন করে তার কপালে চুমু খায় এবং তার সিংহাসনের ঠিক পাশেই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বসতে দেয় । রাজদরবারের এক গায়ককে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে স্বাগতম জানানোর জন্য গান পরিবেশন করতে বলা হয় । সেই সাথে পুরো রাজদরবারে বিশেষ ভাবে তৈরী মদের বিশাল পরিবেশন করা হয় । অতঃপর আনন্দ অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় ঈয়াযীদ নিজের হাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদ ও ওমর ইবনে সাদকে দশ লক্ষ দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) পুরস্কার হিসাবে প্রদান করে । এবং সেই সাথে এক বছরের জন্য ইরাকের কুফা ও বসরা প্রদেশের বার্ষিক খাজনার পুরাটাই উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে গ্রহনের অনুমতি দেয় । ঈয়াযীদ ইবনে মূয়াবীয়া নরপিশাচ উবাইদুল্লাহ ইবনে যীয়াদকে বিচারের আওতায় না এনে এভাবে কেন পুরস্কৃত করেছিল ?
প্রশ্ন – ৯) –
কারবালার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নবী পরিবারের সদস্যগনকে সাত্বনা দেয়ার পরিবর্তে ঈয়াযীদ কেন একটি বছর কারাগারে বন্দী করে রাখল ?
প্রশ্ন – ১০) –
পুরো এক বছর বন্দীকালীন সময় ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ) এর হাত ও পায়ে কেন ২৪ ঘন্টা শিকলের বেড়ী পরিয়ে রাখা হত ?
প্রশ্ন – ১১) –
কেন হোসেনকন্যা সকিনা (সাঃআঃ) কে জেলখানার ভেতরেই কবর দিতে হল ?
প্রশ্ন – ১২) –
নবী পরিবারকে কেন ঈয়াযীদ বন্দীদশা থেকে মুক্ত করতে বাধ্য হল – ঐতিহাসিক সেই প্রেক্ষাপটটি জানাবেন কি ?
প্রশ্ন – ১৩) –
মূয়াবীয়া পুত্র ঈয়াযীদ নিশ্চয়ই শীয়া ছিল না , তাহলে এই সবই কি রাজকীয় মেহমানদারীর সংগায় পড়ে ?
প্রশ্ন – ১৪)
– কারবালার ঘটনার এক বছর পরে পুরো তিনদিন পর্যন্ত মদীনা শহরে অবাধে লুটপাট , সাহাবী হত্যা , বহু নারী ধর্ষণের অনুমতি ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যবাহিনীকে দিয়েছিল ?
প্রশ্ন – ১৫) –
এই বেহিসাব নারী ধর্ষণের ফলে বহু নারী গর্ভবতী হয়েছিল , তাদের জন্য দায়ী কে ?
প্রশ্ন – ১৬) –
মদীনার মসজিদ এ নবীকে ঈয়াযীদ কেন ঘোড়া রাখার আস্তাবল বানিয়েছিল ?
প্রশ্ন – ১৭) –
মক্কাতে পবিত্র ক্বাবা গৃহে ঈয়াযীদ কেন তার সৈন্যদেরকে দিয়ে আগুন লাগিয়েছিল ?

সর্বশেষ প্রশ্ন – কারবালার হত্যাযজ্ঞের প্রধান নায়ক ঈয়াযীদ , মূয়াবীয়া ও আবু সুফিয়ান তাহলে কি শীয়া ছিল ?
সে সকল সুন্নি ভাইরা এই কথাটি বলে থাকেন যে , শীয়ারাই ইমাম হোসেন (আঃ) কে কারবালা প্রান্তরে হত্যা করেছিল – দয়া করে তাদের নিকট থেকে উপরে উল্লেখিত প্রশ্নগুলির টু দি পয়েন্টে যৌক্তিক জবাবের প্রতীক্ষায় থাকলাম ।