৩৫১। অত্যাচারীর জন্য বিচারের দিন এত কঠিন হবে যা তার অত্যাচার অপেক্ষা অনেক অনেক বেশি
৩৫২। অন্যের কি আছে সে দিকে নজর না দেয়াই বড় সম্পদ।
৩৫৩। কথা হতে হবে সংযত এবং আমল হতে হবে পরীক্ষিত। প্রত্যেক আত্মা যা অর্জন করে সেজন্য দায়বদ্ধ” (কুরআন— ৭৪ঃ ৩৮) । শারীরিকভাবে মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানসিকভাবে দান্দিক করা হয়েছে, তাদের ছাড়া যাদের আল্লাহ রক্ষা করেন। তাদের মধ্যে যারা প্রশ্ন করে তারা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে এবং যারা জবাব দেয় তারা বিপন্ন হয়ে পড়ে। এটা এজন্য সম্ভব হয় যে, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তির অভিমত উৎকৃষ্ট সে তার স্বচ্ছ চিন্তা-চেতনা থেকে আনন্দে হোক আর নিরানন্দে হোক সরে পড়ে। এটা সম্ভব এজন্য যে তাদের মধ্যে সব চাইতে জ্ঞানী ব্যক্তিটি এক নজরেই প্রভাবিত হতে পারে এবং একটা কথাতেই সে ভালো মানুষে রূপান্তরিত হতে পারে।
৩৫৪। হে জনমণ্ডলী, আল্লাহকে ভয় করা। কারণ এমন অনেক লোক আছে যাদের অনেক আকাঙ্খা পূর্ণ হয় নি, অনেকে দালানকোঠা করেছে যাতে তারা বাস করতে পারে নি। অনেকে সম্পদ স্তুপীকৃত করেছে যা তাদের ফেলে যেতে হয়েছে। সম্ভবত সে ন্যায়কে পদাবনত করে অন্যায় পথ অবলম্বনপূর্বক এ সম্পদ সংগ্রহ করেছে। অবৈধভাবে অর্জিত এ সম্পদের পাপের ভার তাকে একই বহন করতে হবে। ফলে এ পাপের ভার নিয়ে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে লজ্জা ও শোক সম্বল করে আল্লাহর সম্মুখে হাজির হতে হবে। “সে ইহকাল ও পরকাল উভয়দিকে নষ্ট করেছে—এটা একটা প্রকাশ্য ক্ষতি” (কুরআন-২২ ঃ ১১)।
৩৫৫। পাপে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ না থাকা এক প্রকার সততা ।
৩৫৬। তোমার মুখমন্ডলে প্রকাশিত মর্যাদা প্রকৃত, কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি তা নষ্ট করে দেয়। সুতরাং সাবধানে চিন্তা করে দেখো কার কাছে তুমি সে মর্যাদা নষ্ট করবে।
৩৫৭। যতটুকু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার অধিক প্রশংসা করাই মোসাহেবি আর যতটুকু প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার কম করায়। প্রকাশ ক্ষমতার অভাব না হয় শত্রুতা ।
৩৫৮। সব চাইতে বড় পাপ হল সেটি যেটি করে পাপী তা নগণ্য মনে করে।
৩৫৯। যে ব্যক্তি নিজের দোষত্রুটির প্রতি লক্ষ্য রাখে। সে অন্যের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ায় না। আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকায় যে সন্তুষ্ট থাকে। সে যা পায় নি। সেজন্য দুঃখ করে না। যে বিদ্রোহের জন্য তরবারি বের করে সে তরবারিতেই মারা যায়। যে সহায় সম্বল ছাড়া সংগ্রাম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়। যে গভীরে প্রবেশ করে সে ডুবে থাকে। যে কুখ্যাত স্থানে যায় তার বদনাম হয়। যে বেশি কথা বলে সে বেশি ভুল করে। যে বেশি ভুল করে সে নির্লজ্জ হয়ে পড়ে। যে নির্লজ্জ হয়। সে আল্লাহকে কম ভয় করে। যে আল্লাহকে কম ভয় করে তার হৃদয় মরে যায়। যার হৃদয় মৃত সে আগুনে প্রবেশ করে। যে অন্যের দোষত্রুটি দেখেও নিজেই তা করে থাকে নিঃসন্দেহে সে মূর্থি। তৃপ্তি একটা পুঁজি যা ক্ৰমান্বয়ে হাস (অবচয়) হয় না। যে ব্যক্তি মৃত্যুকে স্মরণ করে সে এ পৃথিবীতে অল্পে তুষ্ট থাকে। যে ব্যক্তি জানে যে, তার কথা তার আমলের একটা অংশ সে বিশেষ লক্ষ্য ছাড়া কথা বলে না।
৩৬০। অত্যাচারী তিন ধরনের পাপ করে— জ্যেষ্ঠদের অমান্য করে অত্যাচার, কনিষ্ঠদের ওপর কর্তৃত্ব আরোপ করে অত্যাচার এবং অন্য অত্যাচারীদের প্রতি সমর্থন দিয়ে অত্যাচার।
৩৬১। অভাব চরম হলে ত্রাণ আসে, শাস্তি চরম হলে আরাম আসে।
৩৬২। আমিরুল মোমেনিন তাঁর এক অনুচরকে বলেছেন যে, তোমার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের জন্য তোমার সীমিত সময়ের বেশিরভাগ ব্যয় করো না। কারণ তারা যদি আল্লাহ প্রেমিক হয়ে থাকে তবে আল্লাহ কখনো তার প্রেমিকদের অযত্নে রাখেন না। আর তারা যদি আল্লাহর শক্র হয়ে থাকে। তবে আল্লাহর শত্রুদের জন্য উদ্বিগ্ন ও ব্যস্ত থাকা তোমার উচিত হবে না।
৩৬৩। তোমার মধ্যে যে সব দোষ ত্রুটি রয়েছে তা সব চাইতে বড় দোষ ত্রুটি মনে করো।
৩৬৪। এক ব্যক্তির পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলে অন্য এক ব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনের সামনে ওই ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানিয়ে বললো, “একজন ঘোড়-সওয়ার পাওয়াতে তোমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।” এতে আমিরুল মোমেনিন বললেন, “এ রকম কথা বলো না; বিলো পরমদাতা আল্লাহর কাছে
তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপলক্ষ হয়েছে এবং আল্লাহ তোমাকে যা দিয়েছেন তাতে আশীবার্দ পুষ্ট হও। সে পরিপূর্ণ জীবন লাভ করুক এবং তার পূণ্য কাজে আল্লাহ তোমাকে আশীবার্দ পুষ্ট করুন।”
৩৬৫। আমিরুল মোমেনিনের একজন আফিসার একটা রাজকীয় বাড়ি নির্মাণ করেছিল। এতে আমিরুল মোমেনিন বললেন, “এটা হলো রূপার মুদ্রার মতো যা নিজের মুখ প্রকাশ করে। নিশ্চয়ই, এ বাড়ি থেকে তোমার কুক্ষিগত সম্পদ সম্পর্কে ধারণা করা যায়।”
৩৬৬। একব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করলো, “যদি কোন লোককে ঘরে আটক করে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় তবে সে কোথা থেকে জীবিকা পাবে।” আমিরুল মোমেনিন বললেন, “বদ্ধ ঘরে যেখান থেকে যে উপায়ে মৃত্যু তার কাছে পৌছে।”
৩৬৭। এক ব্যক্তির মৃত্যুতে সাস্তুনা দিতে গিয়ে আমিরুল মোমেনিন বললেন, “এ বিষয়টি (মৃত্যু) তোমার লোকটি থেকে শুরুও হয় নি শেষও হয় নি। তোমার লোকটি পূর্বেই পরিভ্রমণ শুরু করেছে, কাজেই এখনো সে পরিভ্রমণে আছে একথা ভাবাই উত্তম। হয় সে পুনরায় তোমাদের মাঝে যোগ দেবে, না হয় তোমরা গিয়ে তার সঙ্গে যোগ দিবে।
৩৬৮। হে লোক সকল, তোমাদের দুঃখের সময় তোমরা যেভাবে আল্লাহকে ভয় কর সুখের সময়ও তোমরা সেভাবে ভয় করবে। এটাই তিনি দেখতে চান। নিশ্চয়ই, যাকে জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেয়া হয়েছে সে যদি এটাকে ধীর শাস্তি মনে না করে নিজকে নিরাপদ মনে করে তবে সে প্রতিশ্রুত পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে।
৩৬৯। হে কামনা-বাসনার দাস, কামনা-বাসনা পরিত্যাগ কর। যে এতে নিজকে বিলীন করে দিয়েছে সে দুঃখ-বেদনা ছাড়া কিছুই পায় না। হে জনমান্ডলী, নিজেদের প্রশিক্ষণ নিজেরা গ্রহণ কর এবং তোমাদের স্বাভাবিক অনুরাগের (দুনিয়ার প্রতি) নির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও।
৩৭০। কোন লোকের কথায় সামান্যতম মঙ্গল নিহিত থাকলেও তা মন্দ কথা মনে করো না ।
৩৭১। মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হলে তোমরা প্রথমে রাসুল (সঃ) ও তার আহলুল বাইতের প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করো, তারপর যা যাচনা করার তা করো। কারণ পরম দয়ালু আল্লাহ দুটি অনুরোধের মধ্যে যেটি রাসুল (সঃ) ও তার আহলুল বাইতের প্রতি দরুদ ও সালাম সংল্যাগকৃত সেটি রক্ষা করেন এবং অন্য সব যাচনা বাতিল করে দেন।
৩৭২। যে ব্যক্তি অন্যের সুখ্যাতিতে ঈর্ষান্বিত তার উচিত ঝগড়া-বিবাদ হতে বিরত থাকা ।
৩৭৩। কোন বিষয়ে যথাযথ সময়ের পূর্বে তড়িঘড়ি করা এবং যথাযথ সুযোগ উপেক্ষা করে বিলম্ব করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
৩৭৪। যা ঘটতে পারে না সে বিষয় জিজ্ঞেস করে সময় নষ্ট করো না, কারণ যা ঘটেছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
৩৭৫। কল্পনা একটা স্বচ্ছ আয়না এবং পারিপার্শ্বিক সবকিছু হতে শিক্ষা গ্রহণ করলে উপদেশ পাবে ও সতর্ক হতে পারবে। নিজের উন্নতি সাধনের জন্য এটাই যথেষ্ট যে, অন্যের মধ্যে যে সব মন্দ দেখতে পাও তা নিজের মধ্য থেকে দূর করে দাও।